বাংলাদেশ বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কৃষকের দেড় টাকার সবজি ভোক্তা কিনছেন পনেরো টাকায়

জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ০৮:৩৯ পিএম

কৃষকের দেড় টাকার সবজি ভোক্তা কিনছেন পনেরো টাকায়

ছবি: পাইকারি বাজারে শসা

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান তিন বিঘা জমিতে শসা ফলিয়েছেন। ওইদিন রোববার সকালে তিনি শসা নিয়ে নগরীর পাইকারি সবজি বাজারে আসেন। অপেক্ষার পরও ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পরে তিনি প্রতি ৮০ কেজি শসা প্রতি বস্তা ১০০ টাকায় বিক্রি করেন। আড়তদার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি বস্তা ২০০বিক্রি করেন। কালীবাড়ী বাজারের মালামাল ব্যবসায়ী মো. শাহাবুল শসা কিনে প্রতি কেজি ১৫ দরে ​​বিক্রি করেন।

শুধু সবজি নয়, এখন কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সব ধরনের সবজির দামের অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। শসা, টমেটো, বেগুন, শাকসহ কিছু সবজির দাম কমেছে। বাধ্য হয়েই এসব সবজি ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। সেই ফারি ব্যবসায়ীকে দেন। ব্যবসায়ীর হাত থাকায় ভোক্তাকে কয়েকগুণ বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। একদিকে কৃষকরা লোকসান গুনছেন, অন্যদিকে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা।

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাপকভাবে সবজির চাষ হয়। পাইকাররা মূলত খামার থেকে সবজি সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেন। কিছু কৃষক সরাসরি পাইকারি বাজারে সবজি এনে বিক্রি করেন। আজ নগরীর গোবিন্দনগর পাইকারি সবজির বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে আসেন কৃষকরা। আলোচনার মাধ্যমে রাস্তার বিক্রেতাদের কাছে এসব সবজি বিক্রি করেন তিনি।

সদর উপজেলার পূর্ব বেগুনবাড়ি গ্রামের কৃষক তারিক হোসেন একটি সাধারণ সাইকেলে কয়েক ব্যাগ শসা নিয়ে আসেন। কিন্তু বিক্রি হয়নি। তিনি ফারিয়ার কাছে দেড় টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি করেন। তারিক হোসেন বলেন, বাজারে শসার দাম ও শ্রমের দাম বাড়ছে না। এবার আমি শসা লাগিয়ে ধরা খাইলাম।” কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, কৃষক প্রতি পিস ২০০ টাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছে শসা বিক্রি করছেন।

টমেটো বিক্রি করতে এসেছেন সাহাবাজপুর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী। হোসেন আলী বলেন, “টমেটো দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং পচে যাচ্ছে। জোর করে বাজারে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এর কোনো দাম নেই। টমেটো বিক্রি করেছি ৫ টাকা কেজি। দাম এত খারাপ ছিল না.

কাহারপাড়া গ্রামের কৃষক হাসান আলী তার চল্লিশ শতকে নির্মিত জমিতে কুমড়ার আবাদ করেছিলেন। লাউ কুমড়া বিক্রি করতে এসে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রোদের নিচে ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করে। সকাল৯.৩০ টা থেকে অবশেষে তিনি ফারিয়ার কাছে ১০০ টাকায় ৩৫টি কুমড়া বিক্রি করেন। হাসান আলী বলেন, আমি আমার খামার থেকে কুমড়া বিক্রি করে ৫ হাজার টাকাও জোগাড় করতে পারিনি।

রাণীশাঁখেল জেলার রাওতনগর গ্রামের শসা চাষি গোবিন্দ রায় বলেন, “দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি মণ শসা বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ টাকায়। বর্তমানে কোন ক্রেতা নেই। শসা ‍বিক্রি করতে এসে ৩৮০ টাকা টিকেছে ভটভটি ভাড়া বাদ দিয়ে ’’বর্তমানে পাইকারি বাজারে পটল করলা ১৬টাকা, লম্বা বেগুন ১২ থেকে ১৫ টাকা, চিচিঙ্গা ১৭ টাকা, করলা ২০ টাকা, করলা ১২ টাকা, ঢ্যাঁড়স ১৩ ও বরবটি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কালীবাড়ি বাজারে সবজি কিনতে এসে শহরের আশ্রমপাড়া মহল্লার বাসিন্দা বেলাল মিয়া বলেন, ‘কৃষক প্রতি কেজি শসা দেড় টাকায় বিক্রি করলেও আমরা ভোক্তারা কিনছি ১৫ থেকে ২৫ টাকায়। কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে দামের অনেক ভিন্ন।’

এ বিষয়ে চামেশ্বরী গ্রামের জামাল চৌধুরী , ‘আমরা নানারকম সবজির আবাদ করি।পাইকারদের ওপর, আমাদের বিক্রির জন্য নির্ভর করতে হয়। পাইকারেরা বেশি দামে ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা আবার দাম আরোও বাড়িয়ে দেন।আমরা ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ফসল ফলাই আর লাভ করেন ব্যবসায়ীরা।’

কালীবাড়ি বাজারের পণ্য বিক্রেতা পারভেজ বলেন, তারা দোকানে যে সব সবজি নিয়ে আসে তা একদিনে বিক্রি হয় না। অনেক সময় নষ্ট হয়। অনেক ক্রেতাই সবজি বেছে নেন। তাই দাম দুই থেকে চার টাকা বাড়িয়ে বিক্রি না করলে লোকসান গুনতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁওয়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী প্রথম সংবাদকে বলেন, কাঁচাবাজারে তাঁরা কোনো কেনাবেচা রাখেন না। সেটা নিশ্চিত করাটা মুশকিল। ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সাখওয়াত হোসেন বলেন, তারা নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করে এবং নিশ্চিত করে যে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়।

Link copied!

সর্বশেষ :