সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি বন বিভাগের। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি বনে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে আছে। আলো না থাকায় পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই জেলার জেউধারা স্টেশনের আমরবুনিয়া টহল স্টেশন সংলগ্ন বনাঞ্চলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বালতি ও জগ নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে কখন, কেন এবং কীভাবে আগুন লেগেছে তা বন দফতরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নয়। তারা বলছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণ এখন প্রথম কাজ। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
তবে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, অন্তত দুই দিন আগে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা। ঘটনাস্থল ফরেস্ট অফিস থেকে বেশ দূরে। এ এলাকায় বাঘসহ বন্য প্রাণীর উপস্থিতি অনেক বেশি। তাই মানুষের প্রবেশাধিকার কম। খবর শুনতে দেরি হয়ে গেছে।
আমরবুনিয়া বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধারা বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি গ্রাম। গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভোলা নদী পার হলেই সুন্দরবন। জঙ্গল এলাকা জেউধরা স্টেশনের আমরবুনিয়া টহলের অন্তর্গত। ফাঁড়ির দক্ষিণ পাশে ছোট পথ (জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ফুটপাথ) ধরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার যাওয়ার পর আগুনের লেলিহান শিখা চোখে পড়ে। সন্ধ্যা নাগাদ লতিফের চিহা জেলার কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বিক্ষিপ্ত আগুন ও ধোঁয়া দেখা যায়। তবে পানির উৎস (নদী) অনেক দূরে হওয়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে পানি দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। সন্ধ্যায় বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বন থেকে ফিরে আসে।
বনে আগুন লাগার খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম তারেক সুলতান। সাড়ে চারটার দিকে জেলা প্রশাসককে আগুনের খবর দেওয়া হয়। তিনি ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। জাতিসংঘ বলেছে: “আমি দেখেছি যে সুন্দরবনে আগুন অনেক ব্যাপক। ফায়ার সার্ভিস আসে কিন্তু জায়গাটি বেশ দুর্গম হওয়ায় তাদের পাম্পার দিয়ে কাজ শুরু করতে পারেনি। সবাই মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (বাগেরহাট) উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী প্রথম সংবাদকে বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে মোরেলগঞ্জ ও মংলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। রাতের আঁধার ও বনে বন্য প্রাণীর আতঙ্ক থাকায় আগামীকাল সকাল থেকে কাজ শুরু করবে তারা।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পোড়া এলাকায় যাওয়ার সময় বনের মাঝখানে বানর ও বন মোরগ ছুটতে দেখা যায়। এ সময় তারা চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন।যে এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সুন্দর, বাইন, গেওয়া, জিন, সিংড়ার মতো বিভিন্ন ধরনের লতা বেশি পাওয়া যায়। এরই মধ্যে বেশ কিছু বন পুড়ে গেছে। আগুন যাতে ছড়িয়ে না যায় তার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে বন বিভাগ কিছু পাতার স্তূপ সরিয়ে নিলেও গভীর ফায়ার লাইন কাটতে পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফায়ার লাইন কাটা ও পানি সরবরাহ না করায় রাতারাতি আগুন আরও ছড়িয়ে পড়বে।
তবে স্থানীয় গ্রাম সংরক্ষণ ফোরামের (ভিসিএফ) সদস্য মাহিদুল হাওলাদার দাবি করেছেন, কয়েকদিন আগে আগুন লেগেছিল। তিনি বলেন, এক-দুদিন আগে আগুনের সূত্রপাত হয়। এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে। অন্তত ৫টি বড় এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। এখন বড় আগুন নেই। তবে বাতাসে এটি দ্রুত বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :