কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্রুত উন্নত হচ্ছে এবং সম্প্রতি ওপেনএআই তাদের নতুন মডেল ‘ও৩-মিনি’ উন্মোচন করেছে। আর্ক-এজিআই বেঞ্চমার্কে এর সাফল্য ৮৭.৫% যা পূর্ববর্তী মডেলগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি। এটি অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, আমরা কি আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই)-এর দ্বারপ্রান্তে? পাঁচ বছরের মধ্যে কি মানুষের চাকরি থাকবে? এ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা জরুরি।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
১. এজিআইয়ের কাছে কি আমরা একেবারেই তুচ্ছ হয়ে যাব? ২. এজিআই যদি মানুষের সব কাজ করতে পারে, এমনকি মানুষের চেয়ে ভালোভাবে পারে, তাহলে মানুষ করবেটা কী? ৩. চাকরি না থাকলে মানুষ কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে?
এআই ও এজিআই: মূল পার্থক্য
এআই শব্দটি জনপ্রিয় হওয়ার আগে ‘সাইবারনেটিক্স’ নামে একটি ধারণা প্রচলিত ছিল, যা ১৯৪৮ সালে রবার্ট উইনার প্রবর্তন করেন। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে। তবে এটি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতার জায়গায় প্রতিস্থাপন করতে পারেনি।
বর্তমান এআই অ্যাপগুলো যেমন গুগল সার্চের চেয়ে দ্রুত কাজ করতে পারে, কিন্তু এগুলোর কোনো স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই। এগুলো বিশেষজ্ঞ সহকারীর মতো কাজ করে, যাকে নির্দেশনা না দিলে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না।
অন্যদিকে, এজিআই হলো এমন একটি প্রযুক্তি, যা মানুষের মতোই যেকোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ সম্পাদন করতে পারবে। এটি মানুষের চিন্তার সীমাবদ্ধতা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং নতুন নতুন সমাধান তৈরি করতে সক্ষম হবে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, মানুষের এমন কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা প্রযুক্তিবিদদের এআই থেকে এজিআইয়ে যেতে বাধ্য করছে?
মানুষ বনাম এজিআই
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষের অনন্য কিছু ক্ষমতা রয়েছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।
১. সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা: মানুষ অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়, নিজের ভুল সংশোধন করে এবং ক্রমাগত নতুন কিছু শিখে নিজেকে উন্নত করে।
অসীম জ্ঞানের সম্ভাবনা: মানুষের চিন্তার কোনো সীমানা নেই। নতুন ধারণা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে।
আবিষ্কার ও পরীক্ষার ক্ষমতা: নতুন কিছু করার জন্য মানুষকে অনুমান, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়, যা এআই বা এজিআই সহজে করতে পারে না।
নির্বাচন ও অভিজ্ঞতা: মানুষের মস্তিষ্ক ভুল করতে করতে শেখে এবং অভিজ্ঞতার আলোকে উন্নত সিদ্ধান্ত নেয়।
মনোযোগের পরিবর্তন: একজন ব্যক্তি একই সময়ে ভিন্ন ধরনের কাজ ও সমস্যা নিয়ে ভাবতে পারে, যা এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ।
মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য ও এআইয়ের সীমাবদ্ধতা
এআই হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে শক্তিশালী, কিন্তু এটি কেবল নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে কাজ করতে পারে। এআই যদি দ্রুতগতিতে কাজ করতেও পারে, তবুও এটি সৃষ্টিশীলভাবে নতুন আইডিয়া তৈরি করতে সক্ষম নয়। মানুষ একাধিক ধারণা একত্রিত করে নতুন উদ্ভাবনের জন্ম দিতে পারে, যা এআই করতে পারে না।
ভবিষ্যৎ করণীয়: কিভাবে এআই যুগে টিকে থাকবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সৃষ্টিশীল হলে এবং বহুমুখী দক্ষতা অর্জন করলে এআই আপনার কাজ কেড়ে নিতে পারবে না।
- লেখালেখি, নকশা, বিপণন, ভিডিও প্রোডাকশন, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি দক্ষতা অর্জন করুন।
- যন্ত্রের ওপর নির্ভর না করে নিজের চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়ান।
- নতুন কিছু শিখতে থাকুন এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে তুলুন।
- এআইকে টুল হিসেবে ব্যবহার করুন, প্রতিযোগী হিসেবে নয়।
উপসংহার
এআই এবং এজিআই প্রযুক্তির উন্নতি আমাদের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনবে, তবে এটি মানুষের সৃষ্টিশীলতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং আবিষ্কার করার ক্ষমতার বিকল্প হতে পারবে না। তাই ভবিষ্যতে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা জরুরি। যারা সৃজনশীল হতে পারবেন, তারা সবসময় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এআই একটি টুল মাত্র, যা মানুষের চিন্তা ও উদ্ভাবনকে সহায়তা করতে পারে কিন্তু প্রতিস্থাপন করতে পারে না।
আপনার মতামত লিখুন :