অগমেন্টেড রিয়েলিটি বা AR, সহজ করে বলতে গেলে এক বিশেষ নমুনা বা মডেল যা আমাদের বাস্তব জগতের সাথে ভার্চুয়াল জগতকে যুক্ত করে দেখাবে। যার মাধ্যমে বাস্তব পরিবেশে ভার্চুয়াল অবজেক্ট, গ্রাফিক্স বা তথ্য যোগ করে ব্যবহারকারীর পর্দায় বা ডিভাইসে প্রদর্শিত হবে। আর এই কাজটা করার জন্য মেটা সহ বিশ্বের শীর্ষ টেক কোম্পানিগুলো ক্যামেরা, সেন্সর এবং কাস্টম সিলিকন চিপ যুক্ত এক বিশেষ চশমা উদ্ভাবন করেছে।
মেটা তাদের AR টেকনোলজির নাম দিয়েছে Orion Prototype। মেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ আশা করছেন এই চশমা একদিন স্মার্টফোনের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। মেটার জন্য এটি শুধুমাত্র একটি চশমা নয় বরং অ্যাপ স্টোরের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা কমিয়ে একটি স্বাধীন AR ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও বটে।
তবে মেটার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুব একটা সহজ নয়। তাদের অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাধা বিপত্তি পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌছাতে হবে। বর্তমানে এই প্রোটোটাইপ তৈরি করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১০,০০০ ডলার, যা সব স্তরের ব্যবহারকারীদের জন্য মোটেও সহজলভ্য নয়। এটাকে আরো উন্নত, সহজলভ্য এবং ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে আরও কাজ করতে হবে মেটাকে।
AR গ্লাস Orion এর ডিজাইন ও স্ট্রাকচার
Orion কে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে এটি দেখতে সাধারণ চশমার মতোই মনে হয়। এই চশমার কালো ফ্রেমে রয়েছে ক্যামেরা, সেন্সর এবং কাস্টম সিলিকন চিপ। ফ্রেমটি চওড়া ও ভারী হলেও এটিকে সাধারণ চশমার মতোই পরা যায়। তবে ওজনের কারণে এটি অন্যান্য সাধারণ চশমার তুলনায় কিছুটা ভিন্ন অনুভূত হয়।
Orion কে পুরোপুরি কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে চাইলে এবং এর সকল ফিচার অনুভব করতে চাইলে তিনটি যন্ত্রাংশ দরকার হবে। যেমন:
- চশমা: সিলিকন কার্বাইড লেন্স এবং মাইক্রো-এলইডি প্রজেক্টরসহ তৈরি এই চশমাটি মূল প্রদর্শনের কাজ করবে।
- ওয়্যারলেস কম্পিউট পক: এর ওজন প্রায় ১৮২ গ্রাম। এটি প্রসেসিং ও কানেক্টিভিটির জন্য ব্যবহৃত হবে।
- ইএমজি রিস্টব্যান্ড: এই রিস্টব্যান্ডটি হাতের সূক্ষ্ম নড়াচড়া শনাক্ত করে এবং মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ইশারা প্রসেস করে চশমায় সংকেত পাঠাবে।
Orion ব্যবহারের অভিজ্ঞতা
Orion পরার পর প্রথমেই চোখ ও আঙুলের নির্দেশনা অনুযায়ী এটি দ্রুত ক্যালিব্রেশন করবে। রিস্টব্যান্ডটি হাতের ছোটো ছোটো নড়াচড়া শনাক্ত করবে এবং সেই সংকেতগুলো চশমার ইন্টারফেসে পাঠাবে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা সহজ ও নির্ভুলভাবে চোখের দৃষ্টির মাধ্যমে অ্যাপ বা মেনুতে যেতে পারবেন এবং আঙুলের হালকা ইশারায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
Orion এর বৈশিষ্ট্য ও কাজ
মেটার ডেমো সেশনে Orion এর নানা সুবিধা দেখানো হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো:
- রেসিপি প্রস্তুত: ব্যবহারকারীর হাতের কাছে থাকা উপকরণগুলো দেখে Orion রেসিপি সাজিয়ে দিতে পারবে, যা দেয়ালে প্রজেক্ট করে দেখা যাবে।
- ভিডিও কল ও ভার্চুয়াল চরিত্র: ব্যবহারকারীরা বাস্তবসম্মত ভার্চুয়াল চরিত্রের সাথে কথা বলতে পারবেন।
- ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও মেসেজিং: চশমা পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্ট দেখা যাবে এবং মেসেজ পাঠানো যাবে।
Orion এর গেমিং অভিজ্ঞতা
এই Orion চশমা দিয়ে গেম খেলার সময় চারপাশের মানুষের সাথে সহজেই কথা বলা যাবে, যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (VR) তুলনায় অনেক বেশি আরামদায়ক অনুভূত হবে। গেম খেলার সময় এর ব্যবহারকারী আশপাশ সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারবেন যেটা VR এর ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব এবং ঝুঁকিপূর্ন।
Orion এর প্রদর্শন ও চিত্রের গুণমান
Orion এর ডিসপ্লেতে সিলিকন কার্বাইড লেন্স, মাইক্রো-এলইডি প্রজেক্টর এবং ওয়েভগাইড ব্যবহার করা হয়েছে। এর ৭০ ডিগ্রি ভিউ ফিল্ড বেশ প্রশস্ত যা একাধিক উইন্ডোতে দৃষ্টি রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এর ১৩ পিক্সেল পার ডিগ্রি রেজ্যুলেশনে কিছুটা অস্পষ্টতা এবং ফ্যাকাসে রং দেখা যায়। তবে মেটা ভবিষ্যতে এই রেজ্যুলেশন উন্নত করার পরিকল্পনা করছে।
Orion এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
Orion শুধু মেটার নতুন গেমিং ডিভাইস নয় বরং এটি এআর-নির্ভর ভবিষ্যতের দিকেও ইঙ্গিত করে। জুকারবার্গ চশমাটিকে এমনভাবে তৈরি করতে চান যাতে এটি স্মার্টফোনের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। যদিও এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তবে মেটা ধীরে ধীরে তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার
AR প্রযুক্তির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের আভাস দিয়েছে মেটার Orion Prototype। চোখের ট্র্যাকিং, ইশারা নিয়ন্ত্রণ এবং এআই ইন্টিগ্রেশনসহ এটি ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। এখনো এই প্রযুক্তি সবার জন্য অপরিহার্য না হলেও নিঃসন্দেহে এটি একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :