ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেস্টরুমে তোফাজ্জল হোসেন নামে একজনকে আটকে রেখে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
অভিযোগে উঠে আসে গতকাল বুধবার রাত ১০ টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করা হয় তোফাজ্জলকে।পরবর্তীতে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী। কিন্তু চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা লাশ সেখানে রেখেই চলে যায়৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, লাশটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহত তোফাজ্জল হোসেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের চরদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবদুর রহমানের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তবে ৩/৪ বছর ধরে প্রেম সংক্রান্ত একটি ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরেন। পরবর্তী অল্প সময়ের ব্যবধানে মা-বাবা ও ভাইকে হারিয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তার পরিবারে আপন বলতে কেউ নেই।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায় তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতো। তার এলাকার যারা ওকে চিনতো সবাই দেখা হলে খাবার কিংবা টাকা দিয়ে সহযোগীতা করতো৷ খাবার ও টাকার বাইরে তোফাজ্জলের তেমন কোনো চাহিদাও ছিল না। এমনকি মৃত্যুর আগেও তার শেষ ইচ্ছে ছিলো এক প্লেট ভাত৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন হত্যার ঘটনা শোনার পর ভোরেই প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। মর্গে লাশ দেখার পর তার টিমের একজন শাহবাগ থানায় যান এ বিষয়ে মামলা করার জন্য। এছাড়াও দোষী সনাক্তকরনের জন্য তিনি ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কথা জানান।
ইতিমধ্যেই তোফাজ্জল হত্যা ঘটনার তদন্ত করতে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ শাহবাগ থানায় এজাহার নিতে ও মামলা করার আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনা জানতে পেরেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তবে আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আরও বলেন, এ বিষয়ে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ গোটা দেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সম্মানিত একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীক্ষার্থীদের দ্বারা এহেন গর্হিত কাজে নিন্দা জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে সোচ্চার হয়েছে জনতা। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য শিক্ষার্থী আজ ঘটনার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :