বাংলাদেশ শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সূরা আরাফে শয়তানের অভিশপ্ত হওয়ার গল্প

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০১:২২ পিএম

সূরা আরাফে শয়তানের অভিশপ্ত হওয়ার গল্প

প্রতীকী ছবি

সূরা আরাফের আয়াত ১১ থেকে ১৮ পর্যন্ত শয়তানের অভিশপ্ত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। এই ঘটনাটি মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যার মাধ্যমে শয়তানের সাথে মানুষের শত্রুতা এবং বিপথগামিতার সূত্রপাত হয়। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করার কারণে শয়তানের প্রতি অভিশাপের কথা বলা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা প্রথমে মানুষের পিতা, হজরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করেন এবং তাঁর সাথে থাকা ফেরেশতাদের আদেশ দেন, “তোমরা আদমকে সিজদা করো।” ফেরেশতারা বিনা বাক্য ব্যয়ে আল্লাহর আদেশ পালন করলেও শয়তান, যাকে ইবলীস বলা হয়, সে এই আদেশ অমান্য করে। শয়তান আল্লাহর এই আদেশ অস্বীকার করে এবং তার অহংকার প্রকাশ করে।

আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে জিজ্ঞেস করেন, “তুই কেন সিজদা করলি না?” শয়তান উত্তর দেয়, “আমি তার চেয়ে উত্তম। তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ, আর তাকে সৃষ্টি করেছ মাটি দ্বারা।” এখানে শয়তান তার অস্বীকারের কারণ হিসেবে নিজের শক্তি ও উপাদানকে সামনে আনে, যার মাধ্যমে সে তার অহংকার প্রকাশ করে। শয়তান মনে করে যে, আগুনের সৃষ্টি হওয়া মানুষ থেকে উত্তম, এবং সে মাটির সৃষ্টি হওয়া আদমকে সিজদা করতে প্রস্তুত নয়।

এই অহংকার এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে শয়তানকে আল্লাহ তায়ালা অভিশপ্ত করেন এবং তাকে স্বর্গ থেকে বের করে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তুই এখান থেকে নেমে যা। কেননা তোর এই অধিকার নেই যে, এখানে অহংকার করবি।” আল্লাহ তাকে বললেন, “তুই হীনদের অন্তর্ভুক্ত।”

হুকুম অমান্য করার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্তদের তালিকাভুক্ত করলেন। পুরো ঘটনাটি পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফে বর্ণিত হয়েছে এভাবে—

وَلَقَدۡ خَلَقۡنٰکُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنٰکُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ ٭ۖ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ لَمۡ یَکُنۡ مِّنَ السّٰجِدِیۡنَ ١١ قَالَ مَا مَنَعَکَ اَلَّا تَسۡجُدَ اِذۡ اَمَرۡتُکَ ؕ قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡہُ ۚ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّخَلَقۡتَہٗ مِنۡ طِیۡنٍ ١٢ قَالَ فَاہۡبِطۡ مِنۡہَا فَمَا یَکُوۡنُ لَکَ اَنۡ تَتَکَبَّرَ فِیۡہَا فَاخۡرُجۡ اِنَّکَ مِنَ الصّٰغِرِیۡنَ ١٣ قَالَ اَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ١٤ قَالَ اِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ ١٥ قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَہُمۡ صِرَاطَکَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ ١٦ ثُمَّ لَاٰتِیَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡہِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِہِمۡ وَعَنۡ اَیۡمَانِہِمۡ وَعَنۡ شَمَآئِلِہِمۡ ؕ وَلَا تَجِدُ اَکۡثَرَہُمۡ شٰکِرِیۡنَ ١٧ قَالَ اخۡرُجۡ مِنۡہَا مَذۡءُوۡمًا مَّدۡحُوۡرًا ؕ لَمَنۡ تَبِعَکَ مِنۡہُمۡ لَاَمۡلَـَٔنَّ جَہَنَّمَ مِنۡکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ١٨ 


এবং আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তারপর তোমাদের আকৃতি গঠন করেছি, তারপর ফিরিশতাদেরকে বলেছি, আদমকে সিজদা কর। সুতরাং সকলে সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না

শয়তান, তাঁর দম্ভে, আল্লাহর সিদ্ধান্তে বিরক্ত হয়ে নিজের শপথ গ্রহণ করে যে, “যে দিন মানুষকে কবর থেকে জীবিত করা হবে, সেই দিন পর্যন্ত আমাকে সুযোগ দাও।” আল্লাহ তায়ালা তাকে একশতাংশ সুযোগ দেন এবং বলেন, “তোকে সুযোগ দেওয়া হল।” এই সুযোগে শয়তান মানুষের শত্রু হতে নিজের পরিকল্পনা শুরু করে।

শয়তান আল্লাহর রাস্তায় মানুষের পেছনে লুকিয়ে তাদের পথে বাধা সৃষ্টি করতে শপথ গ্রহণ করে। সে জানায়, “আমি তাদের সম্মুখ থেকে, পিছন থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে তাদের উপর হামলা করব। আর তুমিও তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।” শয়তান তার প্রতিশোধের পরিকল্পনা ও মানুষকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে শুরু করে।

শয়তান শেষমেশ আল্লাহর সঠিক পথে চলতে থাকা মানুষদের বিপথগামী করার কথা ঘোষণা করে এবং আল্লাহ তায়ালার আদেশ অনুযায়ী তাকে একঘরে করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “এখান থেকে ধিকৃত ও বিতাড়িত হয়ে বের হয়ে যা। তাদের মধ্যে যারা তোর পিছনে চলবে (তারাও তোর সঙ্গী হবে), আমি তোদের সকলকে দিয়ে জাহান্নাম ভরব।” এখানে আল্লাহ শয়তানকে জানিয়ে দেন যে, তার যেসব অনুসারী হবে, তাদের পরিণাম হবে জাহান্নাম।

এভাবেই শয়তান তার পাপকর্ম এবং অহংকারের ফলস্বরূপ অভিশপ্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে থাকা ফেরেশতাদের তুলনায় সে দুর্বল ও পরাজিত হয়ে যায়। তার এই অভিশপ্ত হওয়ার গল্পটি শিখিয়েছে যে, আল্লাহর হুকুম অমান্য এবং অহংকারের ফলে মানুষ বা জীন জাতি উভয়ই শয়তানের মতো নীচু অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। শয়তান আমাদের পথভ্রষ্ট করতে এবং আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরাতে চেষ্টা করে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ও নির্দেশনা দ্বারা আমরা তার প্ররোচনাগুলির থেকে দূরে থাকতে পারি।

Link copied!

সর্বশেষ :