বদনজর বা কুদৃষ্টি একটি চিরন্তন সত্য। বদনজরের দ্বারা মানুষ, জীবজন্তু, সম্পদ বা যেকোনো জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইসলামী শিক্ষায় বদনজর ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বহু আলোচনা করা হয়েছে। বদনজরের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন যা একজন মুমিনের জন্য জানা জরুরী।
- জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
العين تدخل الرجل القبر وتدخل الجمل القدر
অর্থঃ বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে। (সহীহ আল জামে শাইখ আলবানী (রহঃ): ১২৪৯)
- জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে আরও বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
أكثر من يموت من أمتي بعد قضاء الله وقدره بالعين
অর্থঃ আমার উম্মতের মধ্যে তাকদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু বদ নজর লাগার দ্বারা হবে। (মুসনাদে বাযযার)
বদনজরের সত্যতা
ইসলামের বহু হাদিসে বদনজরের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, `কাফিররা যখন কোরআন শোনে তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা আপনাকে আছড়ে ফেলবে` এবং বলে `এ তো এক পাগল`। (সুরা কলম, আয়াত: ৫১)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর হুকুমে বদনজরের প্রভাব বাস্তব।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
`তোমরা বদনজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো, কেননা নজরের প্রভাব সত্য`। (ইবনে মাজাহ: ৩৫০৮)
বদনজরের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা
সাহাবি আবু সহল ইবনে হুনাইফ (রা.) গোসল করার সময় কাপড় খোলেন এবং আমির ইবনে রাবিআর নজর তার শরীরে পড়ে। আমের বিস্মিত হয়ে বলেন, `আমি এমন সুন্দর দেহ আগে কখনো দেখিনি`। এর ফলে সহল ইবনে হুনাইফ (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে মহানবী (সা.) আমেরকে নির্দেশ দেন যেন তিনি অজু করে তার পানি সহলের শরীরে ঢেলে দেন। নবী (সা.) এর কথা মত এই আমল সম্পন্ন করার পর সহল ইবনে হুনাইফ সুস্থ হয়ে যান। এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায় বদনজর আসলেই সত্য এবং এর থেকে বাঁচার উপায়ও রয়েছে।
বদনজর থেকে বাঁচার উপায়
বদনজরের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য কিছু বিশেষ আমল রয়েছে যা রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন।
১. কল্যাণের দোয়া পড়া
যদি কারো সৌন্দর্য, সম্পদ বা কোনো প্রকার আশ্চর্যজনক কিছু দেখে মুগ্ধ হন তাহলে তার জন্য কল্যাণের দোয়া করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় `বারাকাল্লাহু ফিহি` অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা এতে বরকত দান করুন। অন্যভাবে বলা যায়, `মাশাআল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ`।
২. অজুর পানি ব্যবহার
যার কুদৃষ্টি লেগেছে তার অজুর পানি বদনজরের শিকার ব্যক্তির শরীরে ঢেলে দিলে বদনজরের প্রভাব কেটে যায়। এটি সহল ইবনে হুনাইফের ঘটনাতেও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
৩. বিশেষ দোয়া পড়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাঈল (আ.)এর কাছ থেকে একটি দোয়া শিখেছেন যা বদনজর থেকে বাঁচার জন্য পড়া যায়।
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।
অর্থ: আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি; যা কিছু আপনাকে কষ্ট দেয়, প্রতিটি সৃষ্টিজীবের অনিষ্ট এবং হিংসুকের বদনজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দান করুন।
৪. সুরা ও দোয়া
সুরা ফালাক ও নাস: রাসুলুল্লাহ (সা.) বদনজর থেকে বাঁচতে সুরা ফালাক ও নাস পাঠ করতেন। এই দুটি সুরা পড়া বদনজরের প্রভাব দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
৫. ছোটদের জন্য বিশেষ দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য দোয়া পড়তেন।
উচ্চারণ: উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
অর্থ: আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখছি সব শয়তান, কষ্টদায়ক বস্তু এবং সকল বদনজর থেকে।
উপসংহার
বদনজরের প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিনের নামাজের পর সুরা ফালাক, সুরা নাস, আয়াতুল কুরসি এবং দরুদ পড়া উত্তম। এভাবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া বদনজরসহ যাবতীয় অনিষ্ট থেকে বাঁচার একটি সুরক্ষিত পন্থা। আল্লাহ তাআলা সবাইকে বদনজর বা কুদৃষ্টির প্রভাব থেকে হেফাজত করুন,আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :