সৌদি আরবের আরাফাতের ময়দানে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো আজ শনিবার। ৯ জিলহজ্জ (স্থানীয় সময়) ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর আরাফাতের ময়দান। আজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানে অবস্থান করেছেন স্থানীয় ও বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশ থেকে আগত লাখ লাখ মুসলমান।
৮ জিলহজ (শুক্রবার) থেকে শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। হজের সেসব আহকাম পালনে শুক্রবার মিনায় অবস্থান করেছেন হজযাত্রীরা। ইহরামের সাদা কাপড় পরে হজের নিয়ত করে তারা মক্কা থেকে মিনায় আসেন। মিনায় সারাদিন অবস্থান করে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ইবাদত করেছেন। শনিবার ফজরের নামাজ আদায় করেই তাদের গন্তব্য আরাফাতের ময়দানে।
মক্কা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বে আরাফাতের ময়দানের অবস্থান। দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং দুই কিলোমিটার প্রস্থের এই ময়দান তিন দিক থেকে পাহাড়বেষ্টিত। সেখানে রয়েছে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এখানেই তার বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
আজ এই আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে হাজিরা লাখো কণ্ঠে পড়বেন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ যার অর্থ হচ্ছে- আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।
রাসূলুল্লাহর (স.) সুন্নত অনুসরণে আজ মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুয়াইকিলি। স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তা সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। এবার বাংলাসহ ৫০টির বেশি ভাষায় আরাফাতের খুতবার অনুবাদও সম্প্রচার করা হবে।
ইসলামের প্রধান পাঁচটি বিধানের অন্যতম হচ্ছে হজ। জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ- এই পাঁচ দিনে মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করে মুসল্লিরা হজ কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকেন। আজ আরাফাতের ময়দানে জুমার খুতবা দেওয়া হবে। এরপর উপস্থিত মুসল্লিরা আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা দোয়া-মোনাজাতে মগ্ন থেকে মাগরিবের পর সবাই আরাফাত থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন এবং রাত কাটাবেন। সেখান থেকে শয়তানকে মারার জন্য পাথরও সংগ্রহ করবেন।
কাল ১০ জিলহজ (রোববার) তারা মিনায় বড় জামারায় গিয়ে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর কোরবানি করে চুল মণ্ডন করবেন বা খাটো করবেন এবং ইহরামের কাপড় বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এর পরে সাফা ও মারওয়ায় সাঈ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সাঈ শেষ করে তারা আবার মিনায় ফিরে যাবেন এবং সেখানে তারা দুই দিন (১১ ও ১২ জিলহজ) তিন জামারায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। সর্বশেষ বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।
সৌদি আরবের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এ বছর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ১৫ লাখসহ মোট ২০ লাখ মুসল্লি হজ পালন করবেন। বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৮৫ হাজারের বেশি মুসল্লি।
আপনার মতামত লিখুন :