লোভলালসা, পরশ্রীকাতরতা থেকে দূরে থাকতে হবে। এ খারাপ প্রবণতা মানুষকে অন্যায় পথে যেতে মদদ জোগায়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের নিম্নস্তরের লোকদের সঙ্গে নিজেকে বিবেচনা কর। তাদের সঙ্গে তোমাদের তুলনা কর। আর তোমাদের উচ্চ স্তরের লোকদের সঙ্গে নিজেকে কোনো দিনও তুলনা কর না। তাদের দিকে ভুলেও তাকিও না।’ আর যতটুকু পেয়েছ, যাই পেয়েছ এতেই পরিতুষ্ট হয়ে আল্লাহর শোকর আদায় কর। আল্লামা তাকী ওসমানীর মতে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ ব্যবস্থাপত্র আমল করলে ইনশা আল্লাহ অন্তরে অল্পে তুষ্টি অর্জিত হবে এবং সান্ত্বনা আসবে। পক্ষান্তরে নবীজির এ ব্যবস্থা উপেক্ষা করে কেউ যদি নিজের চেয়ে উচ্চ স্তরের লোকদের দিকে নজর দেয়, তাহলে দুঃখ-কষ্টের মাঝে হাবুডুবু খেতে খেতে তার অন্তরে এক দিন হিংসা এসে বাসা বাঁধবে। কারণ মানুষের অন্তর যখন লোভী হয়ে ওঠে আর অন্যদের তার চেয়ে অগ্রসর দেখতে পায়, তখন সে অনিবার্যরূপেই হিংসুক হয়ে ওঠে। লোভের সঙ্গে হিংসা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে সে তখন ভাবতে থাকে অমুক আমার আগে চলে গেল! আমি পেছনে পড়ে রইলাম। এভাবেই হিংসা থেকে ধারাবাহিকভাবে বিদ্বেষ, বিচ্ছেদ ও শত্রুতা সৃষ্টি হতে থাকে। লক্ষ্য করলে অবাক হতে হয় যে, আজকের সমাজে এসব জিনিস কত মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকের সমাজে সবার আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে বিরামহীন গতিতে। ফলে এখন আর মানুষ হালাল-হারামের কোনো তোয়াক্কা করছে না। কারণ তারা ধরেই নিয়েছে, আমাকে যে কোনো প্রকারেই হোক প্রতিযোগিতায় জিততে হবে। অমুক জিনিসটি আমার চাই-ই চাই। ন্যায়-অন্যায় এত কিছু চিন্তার সময় কোথায়? হালাল-হারাম যেভাবেই হোক হতেই হবে। তাই মানুষ আজ ধীরে ধীরে সুদ-ঘুষে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ধোঁকাবাজ আর ভেজালে জড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। মোটকথা এখন হেন অপকর্ম নেই যা সে করছে না। এর কারণ, তাকে প্রতিযোগিতায় জিততে হবে এবং যেভাবেই হোক কাক্সিক্ষত জিনিসটি অর্জন করতে হবে। এগুলো হচ্ছে অল্পে তুষ্টি অর্জন না করার ভয়াবহ পরিণতি। এজন্যই রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘অল্পে তুষ্টি অর্জন কর। ওপরতলার দিকে ভুলেও তাকিও না।’ তাহলে লোভ বাড়বে, হিংসা বাড়বে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরশ্রীকাতরতা থেকে দূরে থাকার ও অল্পে তুষ্টি অর্জন করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :