আজ ২৬ জানুয়ারি, আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮৬টি দেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশন ২৬ জানুয়ারিকে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়। এবারের আয়োজনটি ১৭তম আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: "কাস্টমস সেবায় প্রতিশ্রুতি দক্ষতা নিরাপত্তা প্রগতি"। এই প্রতিপাদ্য কাস্টমস সেবার আধুনিকায়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, নিরাপত্তার উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে প্রগতির উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পৃথকভাবে বাণী প্রদান করেছেন। বাণীতে তারা কাস্টমস বিভাগের আধুনিকায়ন ও দক্ষতার উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আয়োজিত বিশেষ সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ সচিব ড. মোঃ খায়রুজ্জামান মজুমদার, এবং এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। সেমিনারটি এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে সভাপতিত্ব করবেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস: নীতি ও আইসিটি) হোসেন আহমদ। এ ছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখবেন এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস: নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান। সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা কাস্টমস বিভাগের বর্তমান অবস্থা, আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন।
ডব্লিউসিও সার্টিফিকেট অফ মেরিট প্রদান:
দিবসটির অন্যতম আকর্ষণ হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশেষ অবদানের জন্য যোগ্য কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ডব্লিউসিও সার্টিফিকেট অফ মেরিট প্রদান। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাস্টমস বিভাগের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।
সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম:
দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে কাস্টমস সম্পর্কিত আলোচনা সভা, মতবিনিময়, এবং টক শো আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার, স্লোগান সম্বলিত স্টিকার, বিলবোর্ড ও ফেস্টুন প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি:
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত) কাস্টমস খাতে ৬১,৯৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৯,০৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এটি শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই অর্জন কাস্টমস বিভাগের দক্ষতার পরিচায়ক।
ইতিহাস ও পটভূমি:
কাস্টমস বিভাগের আন্তর্জাতিক ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং তা ১৯৫০ সালে কাউন্সিল অব কাস্টমস কো-অপারেশন (সিসিসি) গঠনের মাধ্যমে শুরু হয়। ১৯৫৩ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রথম সেশনে ইউরোপের ১৭টি দেশ এই কার্যক্রমে অংশ নেয়। পরে ১৯৯৪ সালে সিসিসি-র নাম পরিবর্তন করে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশন (ডব্লিউসিও) রাখা হয়। বর্তমানে ডব্লিউসিও-তে ১৮৬টি দেশ সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছে। ভবিষ্যতে এটি ১৯৩টি দেশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশের কাস্টমসের ভূমিকা:
বাংলাদেশের কাস্টমস বিভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করতে এবং রাজস্ব আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এই বিভাগের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিকায়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে কাস্টমস বিভাগ রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি করতে কাজ করছে।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য:
বাংলাদেশ কাস্টমস বিভাগ ভবিষ্যতে আরও আধুনিক এবং কার্যকর সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এগুলোর মধ্যে ডিজিটালাইজেশন, অটোমেশন, এবং কাস্টমস সেবায় প্রযুক্তির সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উদযাপনের মাধ্যমে কাস্টমস বিভাগের বর্তমান সাফল্য তুলে ধরা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণ এই দিনটিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :