লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি তার ফেসবুকে দেওয়া একটি বিতর্কিত স্ট্যাটাসের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণবিধি অনুযায়ী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা বিতর্কিত কোনো বক্তব্য প্রকাশ করা নিষিদ্ধ হলেও তিনি তা লঙ্ঘন করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
বিতর্কিত ফেসবুক স্ট্যাটাস
২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তাপসী তাবাসসুম উর্মি ফেসবুকে লেখেন, `ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে`। তার এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি আরও লেখেন, `সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রিসেট বাটনে পুশ করা দেশের অতীত মুছে ফেলেছেন। এতই সহজ! কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়`।
এই স্ট্যাটাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকারি আচরণবিধি অনুসারে কোনও সরকারি কর্মকর্তা এভাবে সরকারের বিরুদ্ধে বা রাজনীতির বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে পারেন না। এই বক্তব্যকে আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবেও দেখা হয়েছে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেছেন তারা ইতোমধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আরও জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যা যা করা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ড. এ কে এম এনামুল হক বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের ১৯৭৯ সালের কন্ডাক্ট রুল অনুসারে আচরণ করতে হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তার এমন বক্তব্য দেওয়া যাবে না যা সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। তাপসীর বক্তব্যকে তিনি এই বিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অতীত স্ট্যাটাস ও রাজনৈতিক অবস্থান
তাপসী তাবাসসুম উর্মির ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে আরও দেখা যায় যে তিনি আগে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে বেশ কিছু স্ট্যাটাস পাওয়া গেছে। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থনে একাধিক পোস্ট করেছেন যা তার সরকারি কর্মকর্তার নিরপেক্ষতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তাপসী তাবাসসুম উর্মির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রযোজ্য আচরণবিধির পরিপন্থী। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে তারা কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ ধরনের ঘটনা সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণের ওপর সরকারের নজরদারি বাড়ানোর ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :