সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই। ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ অক্টোবর মধ্যরাতে মৃত্যুবরণ করেন এই কালজয়ী রাজনীতিবিদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনিসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে ২ অক্টোবর তাকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্কিমিক হার্ট ডিজিজে ভুগছিলেন।
১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন একাধারে বাংলাদেশের একজন সনামধন্য চিকিৎসক, লেখক এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ থেকে এফ.আর.সি.পি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ছিলেন।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল দেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী। চিকিৎসা পেশা থেকে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, যা তাকে দেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের নেতায় পরিণত করে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কয়েকটি প্রধান অধ্যায় নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. রাজনীতিতে প্রবেশ ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব:
১৯৭৮ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে বদরুদ্দোজা চৌধুরী সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আসেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে দলের গঠনমূলক কাজ ও সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
২. প্রথমবার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী:
বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৭৯ সালে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পান, যা তার রাজনীতিতে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সহায়ক হয়।
৩. দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব:
১৯৯১ সালে তিনি আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তখন তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি সংসদ উপনেতার দায়িত্বও পালন করেন।
৪. বিরোধীদলীয় উপনেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী:
১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৫. রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব:
২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বদরুদ্দোজা চৌধুরী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি কিছু রাজনৈতিক বিরোধের সম্মুখীন হন, যার ফলে ২০০২ সালের ২১ জুন তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
৬. বিকল্পধারা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা:
২০০৪ সালে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তিনি এই দল গঠন করেন, যার লক্ষ্য ছিল উদার গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৭. বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন:
তার পুরো রাজনৈতিক জীবন ছিল কর্মমুখর এবং পরিবর্তনমুখী। চিকিৎসা পেশা থেকে রাজনীতিতে এসে তিনি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। দেশ ও জাতির উন্নয়নের লক্ষ্যে আমৃত্যু তার অবদান ছিল অপরিসীম।
আপনার মতামত লিখুন :