ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী হওয়ার অভিযোগে ছুটিতে পাঠানো হাইকোর্টের বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
আইন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, "বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি জনাব শাহেদ নূরউদ্দিন কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬(৮) অনুচ্ছেদ অনুসারে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভূতাপেক্ষভাবে গ্রহণ করেছেন।"
গত ৩০ জানুয়ারি বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। সেদিন সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তিনি প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে তার স্বাক্ষরযুক্ত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
এর আগে, গত বছরের ১৬ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগে ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তাদের বিচারকাজ পরিচালনা থেকে বিরত রাখা হয় এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলতে থাকে।
১২ বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তদন্ত
ছুটিতে পাঠানো বিচারপতিদের মধ্যে ছিলেন:
- বিচারপতি নাইমা হায়দার
- বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ
- বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস
- বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার
- বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান
- বিচারপতি আতাউর রহমান খান
- বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন
- বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামান
- বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম
- বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন
- বিচারপতি খিজির হায়াত
- বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান
এই বিচারপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া দলবাজ বিচারকদের অপসারণের দাবি তুলেছে বিভিন্ন সংগঠন। সাধারণ আইনজীবীরাও দলীয় আনুগত্য দেখানো বিচারকদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ এই বিতর্কিত প্রসঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আইনজীবীরা বলছেন, "আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা ছাড়া ন্যায়বিচার সম্ভব নয়।"
বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণের মাধ্যমে দেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের ইতি ঘটল। এখন দেখার বিষয়, বাকি ১১ বিচারপতির ভাগ্য কী হয় এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়।
আপনার মতামত লিখুন :