বিদেশে দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী অভিবাসনের সংখ্যা বাড়ছে। বছরের প্রথম ৬ মাসে ১৩ হাজার একাউন্টেন্ট বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়েছে। বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের শীর্ষ ১০ কাজের তালিকায় উঠে এসেছে এই পেশাটি। ‘আমি প্রবাসী’ একটি বাংলাদেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যা অভিবাসনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, অভিবাসন ব্যয় হ্রাস এবং অভিবাসন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে কাজ করছে। সম্প্রতি অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে তাঁদের প্রকাশিত একটি অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। একই প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, সৌদি আরব কর্মীদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অভিবাসনে গতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে ৫ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার অভিবাসী কর্মী সৌদি আরবকে তাদের পছন্দের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সৌদি আরব বর্তমানে বেশিরভাগ অভিবাসী জনসংখ্যার প্রথম পছন্দে পরিণত হয়েছে। সৌদি নীতিনির্ধারকদের স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক মনোযোগ দেওয়ার কারণে সেখানে দক্ষ এবং অদক্ষ উভয় ধরনের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সৌদি আরবকে একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্যে পরিণত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া প্রায় ৯৩,০০০ কর্মরত অভিবাসী নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কাতার তৃতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে এই সময়ে ৩৯,৫১৭ জন অভিবাসী কর্মী কাজের জন্য গেছেন।
আমি প্রবাসীর প্রতিবেদনে এসব অভিবাসী কর্মীদের কাজের ধরণ সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় ৮০% অভিবাসী কর্মী ‘সাধারণ’ শ্রেণিতে পড়ে, সংখ্যায় যা ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো। সাধারণ শ্রেণিতে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কাজ অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নির্মাণ কাজ যেখানে ৬৩,৪৬৯ জন অভিবাসী কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ৩৩,৭৪৮ জন কর্মী নিয়ে কারখানার কাজ তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদনের প্রথমার্ধে আরও বলা হয়েছে, মোট অভিবাসী শ্রমিকের ১০.৪% দক্ষ, যার মধ্যে ৩.২% দক্ষ পেশাজীবী, যেমন সফটওয়্যার ডেভেলপার। বাকি ৭% অদক্ষ অভিবাসী। অদক্ষ থেকে দক্ষ অভিবাসনের এই পরিবর্তন বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। ঐতিহাসিকভাবে অদক্ষ শ্রম রপ্তানির জন্য পরিচিত এই দেশের শ্রমশক্তি এখন বেশি দক্ষ এবং বহুমুখী হয়ে উঠছে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সঠিক প্রশিক্ষণের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ভবিষ্যতের জন্য শুভ লক্ষণ, যা নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং শ্রমবাজারে আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছে।
যদিও প্রতি বছর অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, তবুও এই শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম রয়েছে। এই ছয় মাসের সময়কালে মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৬% নারী। এর মধ্যে বেশিরভাগই গৃহকর্মী, যার সংখ্যা ১৩,১৯০।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের অভিবাসন প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা ১,২১,৫২০ অভিবাসী নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। ৯১,৫৩০ জন অভিবাসী নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে চট্টগ্রাম। খুলনা এবং রাজশাহী থেকে যথাক্রমে ৩৭,২৯০ এবং ৩৫,৬৬০ অভিবাসী কর্মী ও ময়মনসিংহ থেকে ২৬,০১০ জন কর্মী বিদেশ গিয়েছে। সিলেট থেকে অভিবাসী হয়েছে ১৭,৩৮০ জন। সবচেয়ে কম অভিবাসী হয়েছে রংপুর বিভাগ থেকে, মাত্র ১৪,৪১০ জন।
এই সময়কালে, ১,৮৩,২৭৪টি ব্যক্তিগত ভিসা ইস্যু করা হয়। গ্রুপ ভিসার সংখ্যা ছিল ২৮,২২৩ এবং ২৪,৬৩৮টি ভিসা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। পূর্ববর্তী মাসগুলোর তুলনায় স্বয়ংক্রিয় বা ওয়ান -স্টপ ভিসার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সময় এ সংখ্যা মোট ভিসার ১% এরও কম ছিল। এই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের সাফল্যের উদাহরণ যা অভিবাসীদের আরও ক্ষমতায়িত করছে। একই সাথে এটি ভিসা প্রসেসিং সহজ করছে এবং মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা কমানোর মাধ্যমে প্রতারণা ও হয়রানি হ্রাসেও অবদান রাখছে।
এই বছরের প্রথমার্ধের অভিবাসন পরিস্থিতি ইতিবাচক ছিল। ইতালিতে ২০,০০০ নতুন ভিসা অনুমোদনের খবর এসেছে যা ইউরোপীয় বাজার খোলার পথে একটি সম্ভাবনাময় অগ্রগতি। আশা করা যাচ্ছে, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে শ্রমবাজারে আরও স্থিতিশীলতা আসবে। তবুও স্বচ্ছ, খরচ-সাশ্রয়ী এবং দ্রুতগতির অভিবাসন এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমি প্রবাসী মতো ডিজিটাল সমাধান কর্মীদের জন্য এসব বিষয় নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :