বাংলাদেশ বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

নিখোঁজ ১১ বছরের সুবা নওগাঁ থেকে উদ্ধার, পুলিশ বলছে প্রেমসংক্রান্ত ঘটনা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম

নিখোঁজ ১১ বছরের সুবা নওগাঁ থেকে উদ্ধার, পুলিশ বলছে প্রেমসংক্রান্ত ঘটনা

নিখোঁজ সুবা উদ্ধার।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ ১১ বছর বয়সী কিশোরী আরাবি ইসলাম সুবাকে নওগাঁ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ বলছে, এটি প্রেমসংক্রান্ত বিষয়, তবে সুবার পরিবার মনে করছে, এটি কোনো প্রতারণা চক্রের কাজ।

নিখোঁজ হওয়ার পটভূমি

সুবা বরিশালের একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুই মাস আগে সে মায়ের চিকিৎসার জন্য পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসে। গত রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফুপাতো ভাইয়ের সঙ্গে বাসা থেকে বের হয় সুবা। তারা আদাবরের জাপান গার্ডেন এলাকার টোকিও স্কয়ার মার্কেটে ঘোরাঘুরি করছিল।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সুবার সঙ্গে তার ফুপাতো ভাই ছাড়াও আরেকজন ছিলেন। ফুটেজে সুবাকে ওই ব্যক্তির হাত ধরে হাঁটতে দেখা যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।

সুবার বাবা ইমরান রাজীব জানান, রাস্তা পার হওয়ার সময় তার ফুপাতো ভাই কিছুটা এগিয়ে গেলে, পেছনে ফিরে সে দেখতে পায় সুবা আর নেই। এ ঘটনায় গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

নওগাঁয় উদ্ধার অভিযান

নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশ ও র‍্যাব অভিযান শুরু করে। তদন্তে জানা যায়, সুবা নওগাঁয় অবস্থান করছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নওগাঁ শহরের আরজি মধ্যপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম জানান, সুবা ও তার সঙ্গীকে খুঁজে বের করতে সকাল থেকেই র‍্যাব ও পুলিশ কাজ করছিল। র‍্যাব তাকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়। তবে যার সঙ্গে সে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই তরুণ মোমিনকে (২১) পাওয়া যায়নি।

কে এই মোমিন?

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মোমিন ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করে এবং টিকটকে সক্রিয়। সুবাও একজন টিকটকার, আর তাদের পরিচয় টিকটকের মাধ্যমেই। নওগাঁর কালিতলা সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হেফাজতে নেওয়া হয় মোমিনের বাবা মোস্তফাকে। তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে ছেলে মেয়ে নিয়ে বাড়ি আসে। তবে তারা বিয়ে করেছে কি না, সে বিষয়ে কিছুই জানেন না। পুলিশ আসার পর দুজনই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

সুবার বক্তব্য

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সুবা জানায়, সে নিজ ইচ্ছায় নওগাঁ এসেছে। তার ভাষায়, "বাসায় ভালো লাগে না তাই।" সে আরও জানায়, মোমিনের সঙ্গে তার পরিচয় টিকটকের মাধ্যমে, এবং তার হাত ধরেই সে ঢাকার বাসে উঠে নওগাঁ চলে আসে।

পুলিশ ও পরিবারের প্রতিক্রিয়া

মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানিয়েছেন, এটি প্রেমসংক্রান্ত ঘটনা। তবে সুবার পরিবার এ ধারণা মানতে নারাজ। পরিবারের দাবি, এটি কোনো প্রতারক চক্রের কাজ। সুবার বাবা বলেন,"আমরা ধারণা করছি, প্রতারক চক্র তাকে নিয়ে গেছে। প্রেমের কোনো সম্পর্ক ছিল না।"

এদিকে, পুলিশ অভিযোগ করেছে, সুবার বাবা উদ্ধারকাজে সহায়তা করেননি। এডিসি জুয়েল রানা বলেন,"পুলিশের অসংখ্য টিম পরিশ্রম করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মেয়ের পরিবার থেকে ছেলের পরিবারকে বলা হয়েছে যেন পুলিশকে হস্তান্তর না করা হয়।"

উদ্ধার পরবর্তী পদক্ষেপ

সুবাকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মোমিনকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনার পেছনে আদৌ কোনো অপরাধী চক্র কাজ করছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় সমাজে শিশুদের টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেষ কথা

১১ বছর বয়সী একটি শিশুর হঠাৎ করে বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। এটি পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব নাকি প্রতারক চক্রের কাজ—সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

 

Link copied!

সর্বশেষ :