১৩ নভেম্বর কী হবে? কেন এই দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ জানুন
নভেম্বরের ১৩ তারিখকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টেলিভিশন উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের মতে, ১৩ নভেম্বরকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বড় মোড় ঘুরানোর ইঙ্গিত বহন করছে। ১৩ নভেম্বরকে ঘিরে দুটি বড় ঘটনা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে - প্রথমত, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচি এবং দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা।লকডাউন' কর্মসূচি নিয়ে শঙ্কাআওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর দেশব্যাপী লকডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে, যদিও এর বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়নি। রাজনৈতিক মহল বলছে, দলটির লক্ষ্য হতে পারে ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার দিন রাজধানীকে অচল করে দেওয়া এবং রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করা। এরই মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মীদের দায়ী করছে।ফরিদপুরে ১৩ তারিখ ঢাকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন’- এমন পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগের জেলা সহসভাপতি ফারুক হোসেনকে পুলিশ আটক করেছে।সরকারও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাজধানীতে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি এবং ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার দিন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের নির্ধারক মুহূর্ত১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করতে পারে। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত ঘটনাগুলোকেই এই মামলার কেন্দ্রবিন্দু বলা হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই রায়ের ঘোষণা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন দিকে মোড় দিতে পারে।সমঝোতার চেষ্টা ও রাজনৈতিক জটিলতারাজনৈতিক বিশ্লেষক জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, সরকার বর্তমানে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে - যেখানে বিএনপি ও জামায়াত উভয়কেই আংশিকভাবে সন্তুষ্ট রাখার প্রচেষ্টা চলছে। বিএনপির জন্য জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের প্রস্তাব। জামায়াতের জন্য পার্লামেন্টে পার্শ্বানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) প্রবর্তনের উদ্যোগ।তবে এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে জটিলতা রয়ে গেছে। বিএনপি এখনো এই ফর্মুলা মানবে কিনা তা অনিশ্চিত, এবং জামায়াতের দাবি— গণভোট আগে অনুষ্ঠিত হতে হবে।অন্যান্য দলের অবস্থানজাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহত করবে। বিএনপি ও জামায়াত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, তবে এখনো বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।বিশ্লেষকের মন্তব্য স্থিতিশীলতার একমাত্র পথ নির্বাচনবিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হলো আগামী জাতীয় নির্বাচন যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করা। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই হতে পারে একমাত্র সমাধান। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১৩ নভেম্বর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হবে, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।জনমনে প্রশ্ন ১৩ নভেম্বর কি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সূচনা হবে, নাকি এটি কেবলই একটি শক্তি প্রদর্শনের কৌশল? সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। বিশ্লেষকদের ভাষায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের উত্তরণ নির্ভর করছে কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতার ওপর।সর্বশেষ খবর, বিশ্লেষণ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য ভিজিট করুন দৈনিক প্রথম সংবাদ এর নিউজ পোর্টালে।[489]