আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে পোশাক বাজার। পাঞ্জাবি, কুর্তির দোকানে এখন উপচে পড়া ভিড়। ঈদের নতুন স্টাইলের পোশাক কিনতে তড়িঘড়ি করে ছুটছেন মার্কেটে। ফ্যাশনপ্রেমিরাও মেতেছেন নতুন ফ্যাশনে। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশনে পরিবর্তন আসে। তবে ফ্যাশনে কিছু জিনিস কখনওই পাল্টায় না। যেমন পকেট স্টাইল। সাধারণত ছেলেদের পাঞ্জাবিতে পকেট থাকে। অন্যদিকে মেয়েদের কুর্তি কামিজে থাকে না কোনো পকেট। কিন্তু ফ্যাশনে এমন রীতি কেন চলে আসছে জানেন?
ছেলেদের জন্য পকেট বরাদ্দ থাকছে পোশাকে আর মেয়েরা কেন বঞ্চিত হচ্ছে এমন অভিযোগও তুলেছেন অনেকে। আধুনিক বাঙালি মেয়েরা কুর্তি, কামিজের ফ্যাশনেও পকেট জুড়ে নিচ্ছেন। কারণ তারাও পোশাকে পকেট পেতে চান। এর পেছনেও রয়েছে কারণ।
সাধারণত পুরুষদের পাঞ্জাবিতে পকেট থাকেই। পাশাপাশি ছেলেদের জন্যে তৈরি প্যান্ট-শার্টেও পকেট রাখা হয়। কারণ পোশাকে পকেট থাকার নানা সুবিধা রয়েছে। মোবাইল ফোন, ওয়ালেট কিংবা খুচরো টাকা পয়সা পেকেটে রাখা যায়। তাছাড়া গরমে একটি ছোট রুমালও পকেটে রাখা যায় অনায়াসেই। তাই ছেলেদের পোশাকে পকেটের স্টাইল থাকেই।
যদিও ছেলেদের পোশাকে পকেট যোগ করার বিষয়টি নতুন নয়। বরং কয়েক শতক ধরেই ছেলেদের ফ্যাশনে পোশাকে পকেট দেওয়ার চল রয়েছে। বিশেষ করে পুরুষদের প্যান্ট, শার্ট এবং কুর্তায় নানা রকমের পকেট দেওয়া হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পোশাকের সৌন্দর্য বাড়াতে বুক পকেটের উপরে সুন্দর কারুকার্যও করা হয়।
তবে মেয়েদের ফ্যাশনে পোশাকে পকেটের কোনো স্টাইলের কথা চিন্তাই করা হয় না। তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু হাতব্যাগে রাখা যায়, সেই ভাবনা থেকেই হয়তো পকেটের চিন্তা ফ্যাশন থেকে দূরেই রয়েছে। তাই মেয়েদের কুর্তি কামিজে রাখা হয় না কোনো পকেট। আবার ফ্যাশনপ্রেমি মেয়েরা কাস্টম ডিজাইনের কুর্তা বানালেও অধিকাংশ সময়ই পকেট দিতে চান না দর্জিরা। যেকোনো অযুহাতেই তা বেশিরভাগ সময় এড়িয়ে যান। এমনকি দর্জিরা একটু অট্ট হাসিও দেন। মার্কেটে পাওয়া কামিজ বা কুর্তিতেও পকেট তো থাকেই না। তাইতো নারীদের মন ভার হতেই পারে। ভাবনা হতে পারে, তাহলে কি মেয়েদের পকেটের প্রয়োজন নেই?
বিশেষজ্ঞরা জানান, আগে অধিকাংশ বাঙালি মেয়েরা শুধু শাড়ি পরতেন। আর শাড়িতে পকেট রাখার কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মেয়েদের ফ্যাশনে যোগ হয়েছে নানা ধরণের পোশাক। এখন মেয়েরা কুর্তা ও শার্ট-প্য়ান্ট পড়ছে। কিন্তু তাতেও যোগ হয় না পকেট স্টাইল। পোশাকের মাপকাঠিতে ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ থেকেই যায়। কারণ মেয়েদের পোশাকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার চিন্তা থেকেই কুর্তি বা কামিজ থেকে পকেটের স্টাইলকে দূরে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে আগে শুধু পুরুষরাই রোজগার করতেন। আর মেয়েরা ঘর সামলাতেন। বাড়ির বাইরে নানা কারণে পুরুষদের পকেটের প্রয়োজন হতো। আর নারীরা ঘরেই থাকতেন তাই তাদের পোশাকে পকেটের প্রয়োজনও হতো না। সেই ভাবনা থেকেই মেয়েদের পোশাক থেকে পকেটকে দূরে রাখা হয়েছে।
এদিকে অনেকে যুক্তি দেন, মেয়েদের পোশাকে পকেট যুক্ত হলে তারা হাত ব্যাগের উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আর ব্যাগ কেনার প্রবণতা কমে যাবে। তাই অনেক ব্র্যান্ড ব্যাগের বাজার ধরে রাখতে আজও নারীদের পোশাকে পকেট যুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানায়।
এদিকে ফ্যাশনেবল বিভিন্ন পোশাকে মেয়েদের সন্তুষ্ট করতে হয়তো কোনো কুর্তা বা পোশাকে পকেট দেওয়া হয়। কিন্তু তা থাকে শুধুমাত্র ‘শো-অফ’-এর জন্যে। যা পোশাকের সৌন্দর্য বাড়ায় ঠিকই, তবে তা কোনো কাজেই আসে না। তাই এমন বৈষম্যে ঘোর আপত্তি জানান অনেক নারীই। তাই বেশিরভাগ নারীরাই দর্জি দিয়ে কুর্তি বা কামিজ সেলাই করার সময় ছোট্ট পকেট যোগ করেন। ফ্যাশনিস্তারা আশা করেন, আগামীর ফ্যাশনে হয়তো কোনোদিন নারীদের পোশাকেও পকেটের চল আসবে। যার সুবিধা নিতে পারবেন নারীরাও।
আপনার মতামত লিখুন :