বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাজশাহী ও খুলনায় জরায়ু মুখ ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে ৯ লক্ষ কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দেয়া হবে

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৪:২৪ পিএম

রাজশাহী ও খুলনায় জরায়ু মুখ ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে ৯ লক্ষ কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দেয়া হবে

এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিভাগ ও খুলনা বিভাগে মোট ৯,৩৩,০০০ কিশোরীকে মানব প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) টিকা প্রদান করা হবে। টিকার মূল লক্ষ্য হলো তাদের জরায়ু মুখ ক্যান্সারসহ এইচপিভি-সম্পর্কিত অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়া।

রাজশাহী বিভাগে টিকাদান কর্মসূচি

রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৯ লক্ষ কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হবে। যা আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৮ দিন ধরে চলবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (আরসিসি) এবং বিভাগের আটটি জেলার মেয়েদেরকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েরা যারা পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত বা বিদ্যালয়ের বাইরে আছে তাদের সাবাইকেই এ টিকা দেওয়া হবে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও টিকার প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর জানান, মেয়েদের টিকা নিতে হলে এই ওয়েবসাইটে ১৭-অঙ্কের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে যাদের অনলাইন নিবন্ধন নেই তাদের বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করা হবে। ডা. কবীর আরও জানান, এই কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

জনসচেতনতার গুরুত্ব

ডা. আনোয়ারুল কবীর জানান, শিশু বিবাহ এবং অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্ক জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই শিক্ষকদের, অভিভাবকদের, এবং গণমাধ্যম কর্মীদের একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে।

খুলনায় টিকাদান কর্মসূচি

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে খুলনা শহরে মোট ৩৩,০০০ কিশোরীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। এ কর্মসূচিও ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৮ দিন ধরে চলবে। খুলনা সিটি স্বাস্থ্য ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক অ্যাডভোকেসি সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম এবং সভাপতিত্ব করেন কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার হালদার।

সরকারি সহযোগিতা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া

সভায় জানানো হয়, সরকার বিনামূল্যে এই টিকা প্রদান করছে এবং লক্ষ্যকৃত মেয়েদের এই ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করার জন্য বলা হয়েছে। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ, সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম, এবং কেসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ শামিউল ইসলাম।

এইচপিভি টিকার গুরুত্ব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুর রহমান সাজীব মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, এইচপিভি টিকা শরীরের প্রথম সারির প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে। যা এইচপিভি সংক্রমণ এবং অন্যান্য ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। বিশেষত জরায়ুর ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ এই টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

টিকাদান কর্মসূচির সফলতা নিশ্চিতকরণ

আরসিসি প্রশাসক এবং রাজশাহী বিভাগের কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর জানান, শিক্ষকদের, অভিভাবকদের এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে এই কর্মসূচি সফল হয়। তিনি বলেন, লক্ষ্যকৃত জনগণকে দ্রুত অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।

আরসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএফএম আনজুমান আরা বেগমও এইচপিভি টিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন, টিকাদান কর্মসূচি সফল হলে জরায়ুর ক্যান্সারসহ অন্যান্য এইচপিভি-সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

উপসংহার

এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের লক্ষ লক্ষ কিশোরীকে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে। সরকার বিনামূল্যে এই টিকা প্রদান করছে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় এই কর্মসূচি সাফল্যের মুখ দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

Link copied!

সর্বশেষ :