সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এখানে ভ্রমণের ওপর সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের জীবনে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেন্টমার্টিন পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোটের সদস্যরা জানিয়েছেন, এমন পদক্ষেপে দ্বীপের প্রায় ১২ হাজার মানুষের জীবিকা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে। তারা মনে করেন, সঠিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করে পরিবেশ রক্ষা সম্ভব, নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজন নেই।
সমস্যার মূল কারণ ও প্রভাব
সেন্টমার্টিনে অপ্রতুল নিয়ন্ত্রণের ফলে অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে পরিবেশগত ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারি বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে। এ কারণেই দ্বীপে ভ্রমণের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অনুমতি ছাড়া কেউই সেন্টমার্টিনে যেতে পারছেন না, এমনকি সেখানে রাত্রীযাপনের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণের ফলে পর্যটন ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এবং স্থানীয়রা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
নিষেধাজ্ঞায় স্থানীয়দের উদ্বেগ
দ্বীপের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের আয়ের উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্বীপের অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল, যেখানে ১৭টি সেক্টরে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে আসছিলেন। বর্তমানে বেশিরভাগ হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ বন্ধ অবস্থায় আছে। এমনকি বাইরের বিনিয়োগকারীরাও দ্বীপে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন না। স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পর্যটন ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে দ্বীপের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং দীর্ঘমেয়াদে দ্বীপের সামাজিক স্থিতিশীলতাও বিপর্যস্ত হবে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, দ্বীপে কর্মী আনতে কষ্ট হচ্ছে, ফলে শুধুমাত্র দু-একজন কর্মী দিয়ে তার ব্যবসা চালাতে হচ্ছে। অন্যদিকে, দ্বীপের বাসিন্দাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে দ্বীপে প্রবেশ করতে হচ্ছে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এছাড়াও দ্বীপের বাইরে আত্মীয়তা করা স্বজনরা দ্বীপে আসতে না পারায় তাদের পারিবারিক জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পর্যটকদের ভোগান্তি
সেন্টমার্টিনে চলমান ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর নিয়মাবলির কারণে পর্যটকরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসলেও অনেকেই দ্বীপে পৌঁছাতে পারছেন না। উদাহরণস্বরূপ, রাজশাহী থেকে আসা আয়েশা সিদ্দিকার পরিবার সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করলেও টেকনাফ থেকে দ্বীপে যেতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা অনেক পর্যটকের জন্য হতাশাজনক অভিজ্ঞতা তৈরি করছে।
বিকল্প প্রস্তাবনা
সেন্টমার্টিন পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট থেকে পরিবেশ বান্ধব ও নিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের মতে, সঠিক নীতিমালা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা এবং পর্যটন শিল্প চালু রাখা সম্ভব। তারা পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির পরামর্শ দেন, যা মানা হলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াই পর্যটন চালু রাখা সম্ভব হবে। তারা সরকারি সহায়তা ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন, যাতে দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রা সচল থাকে।
উপসংহার
সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি দ্বীপের মানুষের জীবিকা ও পর্যটন খাত টিকিয়ে রাখার জন্য একটি টেকসই ও বিজ্ঞানসম্মত পর্যটন নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। পর্যটন নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে কঠোর পরিবেশবান্ধব নীতি ও সঠিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেন্টমার্টিনকে একটি টেকসই পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :