যেকোনো সম্পর্কের মাঝে দুজনের মেলবন্ধন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেক সময় এই মেলবন্ধনের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ ঘটে, যা বদলে দিতে পারে সম্পর্কের গতি। সম্পর্কের মাঝে এই তৃতীয় ব্যক্তি হতে পারে একজন বন্ধু, সহকর্মী, পরিবারের সদস্য কিংবা অন্য কেউ। তাদের উপস্থিতি সম্পর্কের গঠন, স্থিতি এবং শক্তিতে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।এই প্রভাব কখনো হতে পারে ইতিবাচক আবার কখনো তা ফেলতে পারে সম্পর্কের উপর অশুভ ছায়া।
সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির ইতিবাচক প্রভাব
পরামর্শ ও সমর্থন
অনেক সময় তৃতীয় ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ কিংবা সমর্থন যেকোনো সম্পর্কের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারে টনিকের মত। কেননা এই সকল পরিস্থিতি তৃতীয় ব্যক্তির নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করতে পারে এবং একটা যৌথ সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনও বন্ধু বা পরিবার যখন সম্পর্কের টানাপোড়েনের সমস্যায় ভোগে তখন তৃতীয় কোনো ব্যক্তি পারে সম্পর্কের মাঝের এই ফাটল জোরা লাগাতে।
নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
তৃতীয় ব্যক্তি অনেক সময় যেকোনো সম্পর্কের সমস্যাগুলিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করে। তাদের পরামর্শ বা অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষায় সম্পর্কের দ্বন্দ্বের মধ্যে আসতে পারে সৃজনশীল সমাধান, যা সম্পর্ককে আরো মজবুত করতে পারে।
অভিজ্ঞতা শেয়ার
যেসকল তৃতীয় ব্যক্তি যেকোন সম্পর্কের ব্যাপারে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, তারা অন্যদের সম্পর্ককে টেকসই রাখার পরামর্শও দিতে পারেন। তারা তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন কোনো দম্পতিকে সচেতন করে থাকেন।
সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির নেতিবাচক প্রভাব
বিশ্বাসঘাতকতা ও সন্দেহ
তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি অনেক সময় যেকোনো সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাসের অভাব এবং সন্দেহের জন্ম দেয়। বিশেষত যখন তৃতীয় ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে থাকা কোনো একজনের গভীর সখ্যতা তৈরি হয় তখন অপর ব্যক্তি অনুভব করতে পারে যে তার সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা বা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
যোগাযোগে বাধা
সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপ দুজন মানুষের সরাসরি যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি দুজনের মধ্যকার সমস্যাগুলির সমাধানে তৃতীয় ব্যক্তির অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে এবং সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
স্বার্থপরতা ও পক্ষপাতিত্ব
কখনো কখনো তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপের ফলে সম্পর্কের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব দেখা দিতে পারে। তারা একপক্ষের স্বার্থ রক্ষায় অন্য পক্ষের প্রতি অসঙ্গত আচরণ করতে পারেন যা সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে।
প্রতিকার
খোলামেলা আলোচনা
তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপ এড়াতে বা এর প্রভাব কমাতে সম্পর্কের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গীরা একে অপরের অনুভূতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করলে তৃতীয় ব্যক্তির প্রভাব কমিয়ে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।
বিশ্বাস বজায় রাখা
সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি হল বিশ্বাস। তৃতীয় ব্যাক্তির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও একে অপরের উপর বিশ্বাস অটুট রাখলে সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব। সঙ্গীদের উচিত একে অপরের প্রতি স্বচ্ছ থাকা এবং সব বিষয়ে সঠিকভাবে যোগাযোগ করা।
সীমারেখা নির্ধারণ
তৃতীয় ব্যক্তির সাথে সম্পর্কের সীমানা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। কখন এবং কীভাবে তৃতীয় ব্যক্তির মতামত গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে সঙ্গীরা যদি একমত হন তাহলে তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপ সম্পর্কের কোনো ধরনের ক্ষতিই করতে পারবে না।
উপসংহার
সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় পক্ষের প্রভাব ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। কিন্তু তা নির্ভর করে কিভাবে সেই তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতিকে হ্যান্ডেল করা হচ্ছে। সতর্কতার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সীমানা নির্ধারণ, খোলামেলা আলোচনা এবং বিশ্বাস বজায় রাখার মাধ্যমে তৃতীয় ব্যক্তির নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :