১৯৯৩ সালের দিকে চীনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে মিংকাওউঝু ডর্মে চারজন অবিবাহিত এবং সিঙ্গেল ছাত্র ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর বিপরীতে একাকীত্ব উদযাপনের একটি দিন নিয়ে আলোচনা করছিলো। যেহেতু তারা সবসময় একা থাকে, সেহেতু তাদেরও এমন একটি দিন থাকা উচিত যেদিন তারা নিজেদের মতো করে উদযাপন করতে পারবে।
যেই ভাবা সেই কাজ, মজার ছলেই তারা ১১ই নভেম্বরকে তাদের নিজেদের জন্য একটি বিশেষ দিন নির্ধারণ করলো। যদিও এর পেছনেও লজিক রয়েছে। ১১/১১ তারিখটিতে আছে চারটি এক যা তাদের একাকীত্বের প্রতীক। এরপর থেকেই তারা এই দিনটিকে "ব্যাচেলর্স ডে" নামে ঘোষণা করল। এই দিনে তারা নিজেদের জন্য উপহার কিনবে, আনন্দ করবে এবং একাকিত্বকে বিশেষভাবে উদযাপন করবে।
পরবর্তীতে তাদের খবরটি ছড়িয়ে পড়ল নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কোনায়। ছাত্রছাত্রীরা এই নতুন উদযাপনের আইডিয়াটি খুব ভালোভাবে গ্রহণ করল এবং সবাই একযোগে এই দিনটি পালন করতে শুরু করল। এর পরের বছরগুলোতে এটি শুধুমাত্র এক বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ রইল না, এটি ছড়িয়ে পড়ল চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে সারাদেশে। "ব্যাচেলর্স ডে" ধীরে ধীরে "সিঙ্গেলস ডে" নামে পরিচিত হয়ে উঠল, যেখানে অবিবাহিত পুরুষ-নারী সবাই নিজেদের একাকিত্ব উদযাপন করত।
সিঙ্গেলস ডে উইস
দিনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এক সময়ে চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা এই বিশেষ দিনটিকে দেখল তাদের ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে। ২০০৯ সালে তারা ঘোষণা করল, ১১ই নভেম্বর তারা তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ২৪ ঘণ্টার জন্য বিশেষ ছাড় দেবে, যেখানে ক্রেতারা নিজেদের জন্য মনমতো জিনিস কিনতে পারবে। আর তখন থেকেই শুরু হল "সিঙ্গেলস ডে"র আসল বাণিজ্যিক যাত্রা। প্রথম বছরে প্রচুর মানুষ এই ছাড়ের সুযোগ নিল এবং আলিবাবা ব্যাপক সাফল্য পেল।
ধীরে ধীরে প্রতি বছর এই দিনটি চীনের বৃহত্তম শপিং দিবসে পরিণত হতে লাগল। ২০২১ সালে আলিবাবা এই একদিনে প্রায় $৮৪.৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য বিক্রি করে, যেখানে বিলাসবহুল পণ্য, বিউটি প্রোডাক্ট, ক্রীড়া সামগ্রী এবং অন্তর্বাসের মতো পণ্য ছিল ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়।
এখন শুধু চীন নয়, সিঙ্গেলস ডে ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু খুচরা বিক্রেতাও বিশেষ ছাড় দিয়ে দিনটি উদযাপন করে। বিশেষত, জার্মানি, পোল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ডে এই দিবসটির ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের বিজনেস জায়ান্টগুলো, বিশেষ করে দারাজ দিনটিকে ইলেভেন ইলেভেন সেল হিসেবে প্রচার করে বিশেষ ব্যবসায়ীক দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে।
যদিও ব্ল্যাক ফ্রাইডে এবং সাইবার মানডের মতো সিঙ্গেলস ডে এতটা পরিচিত না হলেও দিনটি বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। সিঙ্গেলস ডে এখন বিশ্বজুড়ে অবিবাহিতদের জন্য একদিনের উপহার, আনন্দ এবং একক জীবন উদযাপনের দিন।
এটি এখন আর শুধু অবিবাহিতদের নয় বরং বিভিন্ন বয়সের এবং সম্পর্কের মানুষও এই ছাড়ের সুযোগ গ্রহণ করে। আলিবাবা, আমাজন এমনকি বাংলাদেশের দারাজের মত শপিং জায়ান্টের বিশেষ ছাড়ের কারণে এটি কেবল একটি উদযাপন নয় বিশ্বের বৃহত্তম শপিং ইভেন্টে পরিণত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :