বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চীনের সিংকহোল: যার শত শত মিটার গভীরে রয়েছে নিজস্ব ইকোসিস্টেম এবং জীববৈচিত্র্য

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ১১:৩৬ এএম

চীনের সিংকহোল: যার শত শত মিটার গভীরে রয়েছে নিজস্ব ইকোসিস্টেম এবং জীববৈচিত্র্য

সিংকহোল। ছবি: এআই

আপনি জানেন কি চীনের বিশাল কার্স্ট পর্বতমালা‍‍`র মাঝেই লুকিয়ে আছে আরেক অদ্ভুত রহস্যময় দুনিয়া! শত শত মিটার গভীর ও চওড়া এই রহস্যময় সিঙ্কহোল গুলোকে বলা হয় ‍‍`তিয়ানকেং‍‍` বা ‍‍`স্বর্গের গহ্বর‍‍`। এদের গভীরে রয়েছে এক অনন্য জীববৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশ যেখানে বিরল এবং বিপন্ন প্রাণীর বাস। যা স্থানীয় লোকজনের কাছে অন্য এক পৃথিবীর প্রবেশদ্বার হিসেবেও পরিচিত।

তিয়ানকেং এর ইতিহাস

কাহিনীটা শুরু হয় হাজার হাজার বছর আগে। ভূগর্ভস্থ নদীগুলো চুনাপাথরের পর্বতের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং ধীরে ধীরে পাথর ক্ষয় হতে থাকে। এরপর একটা সময় আসে যখন মাটির উপরের অংশ ভেঙে পড়ে এবং তৈরি হয় বিশাল সিঙ্কহোল। এভাবেই চীনের কার্স্ট অঞ্চলে তৈরি হয়েছে শত শত তিয়ানকেং যা পৃথিবীর অন্য কোথাও বিরল।

তিয়ানকেং-এর ভেতরের এই পরিবেশ যেন এক স্বতন্ত্র জগৎ। যার রয়েছে নিজস্ব ইকোসিস্টেম এবং জীববৈচিত্র্য। গুহার অন্ধকার কোণে ফ্যাকাসে এবং অন্ধ মাছেরা সাঁতার কাটে, গাছের ওপর উড়ে বেড়ায় আর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে রাখে বাদুড়েরা। এখানেই পাওয়া যায় এক অদ্ভুত ধরনের পোকা যার জিরাফের মতো লম্বা গলা এবং শিকার ধরার জন্য রয়েছে ধারালো দাঁত। গুহার দেয়ালে ঝুলে থাকে বিরল মস এবং অর্কিডের মতো উদ্ভিদ, যেগুলো বাইরের দুনিয়ায় বহু আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সিংকহোলের অভ্যন্তর। ছবি: এআই

গাছপালা আর প্রাণীর এই জগৎ স্থানীয় বিজ্ঞানীদের জন্য বিশাল এক গবেষণা ক্ষেত্র। এখানে এমন কিছু প্রজাতি পাওয়া গেছে যা বহু বছর ধরে বিলুপ্ত বলে গন্য হয়ে আসছে। ২০১৬ সালের এক অভিযানে বিজ্ঞানীরা গুইঝৌ প্রদেশের এক তিয়ানকেং থেকে প্রায় ডজনখানেক নতুন উদ্ভিদ আবিষ্কার করেন। এরপর ২০২১ সালে ইউনান প্রদেশে পুনরায় আবিষ্কৃত হয় শতাব্দী পুরনো দুটি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতি।

তবে তিয়ানকেং নিয়ে বিজ্ঞানীদের উদ্বেগেরও শেষ নেই। প্রাকৃতিক পরিবেশের এই সম্পদগুলো ট্যুরিজমের চাপে ক্ষতির মুখে পড়েছে। দাশিওয়েই তিয়ানকেং-এর মতো অনেক তিয়ানকেং-এ পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্ল্যাটফর্ম। যদিও এই পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্মগুলো গহ্বরের গভীরতা ও রহস্যময়তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে, তবু তিয়ানকেং-এর বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষায় এসব উন্নয়ন বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা চান এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিয়ে পর্যটন ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা হোক।
চীনের এই স্বর্গের গহ্বরগুলো শুধু প্রকৃতির এক অপার বিস্ময় নয় বরং তারা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিবেশ রক্ষার একটা বড় সম্ভাবনা।

 

Link copied!

সর্বশেষ :