সে ছিল তখন ঊনিশ আমি তখন ছত্রিশ, প্রেমে পড়তে লাগেনা বয়স মনে থাকে না ঊনিশ বিশ, মন মন মন মনতো চাইলো, বিবাহিত আমি তাতে কি হলো, অনুভূতিরা কি বাধ্যতামূলক একই থাকে অহর্ণিশ। প্রেম নিয়ে বাংলা গানের জীবনমুখী শিল্পী নচিকেতার গান এটি। প্রেমের ক্ষেত্রে যে বয়স কোন বিবেচ্য বিষয় নয়, এই রকম ধারণা আমাদের সমাজেও বেশ প্রচলিত। গড় আয়ু পার করে কিংবা তার কাছাকাছি সময়ে বিয়ে অহরহই ঘটছে। এ সকল ঘটনায় সমাজে যে খুব একটা হৈচৈ পড়ে যাচ্ছে এমনও নয়। বাঙালি সমাজ যেন তা অনেক আগে থেকেই জানে। প্রখ্যাত ইংরেজ প্রাবন্ধিক ফ্রান্সিস বেকন তার ‘অব লাভ’ গ্রন্থে বলেন, স্ত্রী হচ্ছে তরুণের কর্ত্রী, মধ্যবয়সী পুরুষের সঙ্গিনী আর বৃদ্ধের সেবিকা। ফ্রান্সিসের এমন উক্তি থেকেও শেষ বয়সে প্রেম ভালবাসার একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। সেইসাথে এই ধরণের প্রেমের বৈধতাও দেওয়া যায়। অবশ্য সমাজে প্রেম ভালবাসার বৈধতা বহু আগে থেকে প্রচলিত, আর তা হচ্ছে বিয়ে। যোগ্য সঙ্গীকে উপযুক্ত স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই বিয়ের প্রচলন।
তাই খুব সহজেই বলা যায়, প্রেমের কোনও নির্দিষ্ট বয়স হয় না। প্রেম ভালবাসাকে বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। কিন্তু তবুও আমরা যৌবনেই জীবনসঙ্গী খোঁজার কাজটা সেরে ফেলি। কারও জীবনে আবার শেষ লগ্নে এসে প্রেম হয়। তবে বার্ধক্যে প্রেমের বেশ নির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকে। তার মধ্যে অন্যতম কারন হল শারীরিক বা জৈবিক চাহিদা, মানসিক নির্ভরতা বা একাকিত্ব। তবে, অনেকেই বিশেষ করে মনোবিজ্ঞানীরা বার্ধক্যের প্রেমের ক্ষেত্রে মানসিক দিকটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের মতে, নাগরিক এই জীবন ধীরে ধীরে আমাদের একটা সংস্কৃতিগত পরিবর্তন ঘটছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের কারণে অনেকেই এখন বৃদ্ধ এখন মা/ বাবাকে ছেড়ে আলাদা থাকছে। অবশ্য একটা সময় আমাদের সংস্কৃতিতে একসাথে থাকার কিংবা যৌথ পরিবারে থাকার প্রবণতা ছিল। সমাজে মুরব্বীদের অন্য রকম একটা সম্মান বা গুরুত্ব ছিল।
এই বিষয়টা যে একেবারে উঠে গেছে, হয়তো তা নয়। তবে একটা পরিবর্তন ধীরে ধীরে আসছে। ফলে আমাদের বয়োবৃদ্ধরা অনেক ক্ষেত্রে একা হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে তাদের সেবা কিংবা খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সময় কাটানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। তাই এই সময়ে যদি কেউ তার জন্য উপযুক্ত সঙ্গী পেয়ে যায়, তাহলে সবারই একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী থাকা উচিত। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে আবার ভিন্ন বিষয়ও কাজ করে। অবশ্য বিয়ের ক্ষেত্রে সমাজ অনেক সময়ই বাঁধা নিষেধ আরোপ করে না। আর এমন ঘটনা বিরল না হলেও হাতে গোনা। তাই হয়তো তেমন একটা আলোচনা দেখা যায় না। তবে অবস্থা যাই হোক। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বার্ধক্যে কিংবা একটু বেশি বয়সে প্রেম ভালবাসার ক্ষেত্রে মানসিক বিষয়টি সবচেয়ে বেশি কাজ করে। এদের মধ্যে বেশ বড় একটা অংশ বিপরীত লিঙ্গের একজন সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা কিংবা অভাববোধ করে।
আপনার মতামত লিখুন :