আবহাওয়া যেমনই থাকুক না কেন, সুস্থ থাকতে শরীরচর্চায় দীর্ঘ বিরতি দেওয়া যাবে না। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে অব্যাহত রাখতে হবে শরীরচর্চা। তাপপ্রবাহের মতো প্রকট পরিস্থিতিতে রোজ সম্ভব না হলেও সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ব্যায়াম করুন। গরমে-ঘামে বিপর্যস্ত সময়ে ব্যায়াম করতে হলে অবশ্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তাতে এই বিরূপ আবহাওয়াতেও স্বস্তি বজায় থাকবে। ব্যায়াম করতে গিয়ে উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিও কমবে। গরমে ব্যায়াম করার সময় এবং আগে-পরে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে, জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
বুঝেশুনে ব্যায়ামের সময় বাছুন
২৪ ঘণ্টার ভেতর যখন পরিবেশের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে, ব্যায়ামের জন্য সেই সময়টা বেছে নিন। ভোরবেলা ব্যায়ামের জন্য দারুণ সময়। চাইলে বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায়ও করতে পারেন। রাতেও ব্যায়াম করা যায়। তবে ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগেই শরীরচর্চার পাট চুকিয়ে ফেলুন। খুব গরম আবহাওয়ায় ব্যায়াম করতে গেলে উত্তাপজনিত অসুস্থতায় ভুগতে পারেন। শরীর হয়ে পড়তে পারে ক্লান্ত, অবসন্ন। তাই ঝুঁকি নেবেন না। তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে (যেমন ব্যায়ামাগারে) ব্যায়াম করলে অবশ্য দিনের অন্যান্য সময়েও ব্যায়াম করা যেতে পারে।
পোশাকপরিচ্ছদ হোক আরামদায়ক
পাতলা, সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাক পরে ব্যায়াম করুন, যাতে শরীরে বাতাস লাগে। এমন পোশাক পরা অবস্থায় ঘেমে গেলেও ঘাম শুকিয়ে যায় সহজে। কালো বা খুব গাঢ় রঙের পোশাক না পরাই ভালো। এসব পোশাক তাপ ধরে রাখে। হালকা রঙের, হালকা নকশার পোশাক বেছে নিন।
ব্যায়ামের বিরতিতেও চলুক পানি কিংবা পানীয়
ব্যায়ামের আগে ও ব্যায়ামের মাঝের বিরতিতে পানি কিংবা পানীয় খেতে পারেন। ব্যায়ামের পর তো পানি বা পানীয় খেতেই হবে। অবশ্য ব্যায়ামের আগে বা ব্যায়ামের বিরতিতে ভরপেট পানি খেয়ে ফেলা উচিত নয়। অতিরিক্ত ঘাম হলে স্যালাইন, ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক কিংবা সামান্য লবণমিশ্রিত পানি বা পানীয় খেতে পারেন। চা-কফির অভ্যাস থাকলে সারা দিনের জন্য আপনার বরাদ্দ চা বা কফিটুকু ব্যায়ামের আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টা আগে গ্রহণ করতে পারেন।
খাবার খাবেন সময় বুঝে
ব্যায়ামের আগে ভারী খাবার খাওয়া যাবে না। পরিমিত পরিমাণে হালকা খাবার খাওয়া যাবে। সেটিও খাওয়া উচিত ব্যায়ামের অন্তত আধা ঘণ্টা আগে। নাহলে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং ব্যায়ামের সময় পেশিতে রক্তসঞ্চালন কমে গিয়ে পেশিতে ব্যথাও হতে পারে। আবার ক্ষুধার্ত অবস্থায়ও ব্যায়াম করা উচিত নয়। হয়তো সারা দিনের কাজ সেরে বিকেলে ব্যায়াম করতে চান আপনি; কিংবা ভোরবেলা, অর্থাৎ সকালের নাশতার আগে। এমন ক্ষেত্রে একটা বিস্কুট খেয়ে নিতে পারেন। ব্যায়াম শেষ করার পরও অন্তত আধা ঘণ্টা বিরতি দিয়ে খাবার খাওয়া উচিত।
ব্যায়ামের ধরন বদলানো জরুরি নয়
গরম পড়ে গেছে বলে ব্যায়ামের ধরন বদলাতে হবে, এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বরং আপনি যে ধরনের ব্যায়ামে অভ্যস্ত, সেটিই করুন। তবে ব্যায়ামের পর সঠিক নিয়মে কুল ডাউন করা জরুরি।
ঘাম মুছে ফেলুন
ব্যায়াম করলে এ সময় বেশি ঘাম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। ব্যায়ামের বিরতিতে ঘাম মুছে ফেলুন। নাহলে হতে পারে ঘামাচি, এমনকি ছত্রাক সংক্রমণও।
অসুস্থ বোধ করলে ব্যায়াম করবেন না
অতিরিক্ত ক্লান্তি, অবসন্নতা, অত্যধিক গরম বোধ করা, শরীর অস্বাভাবিকভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা, মাথা হালকা বোধ করা, মাথা ঘোরানো, বুক ধড়ফড় করা কিংবা মুখ শুকিয়ে আসার মতো সমস্যা হতে পারে অত্যধিক গরমে। ব্যায়ামের আগে কিংবা ব্যায়ামের সময় যেকোনো ধরনের অসুস্থতা বোধ করলে সেদিন আর ব্যায়াম করা উচিত নয়।
- লেখা : ডা. তাসনোভা মাহিন, সহযোগী কনসালট্যান্ট,মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড।
আপনার মতামত লিখুন :