দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর পার্বত্য জেলা বান্দরবান পর্যটকদের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত করা হয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী সংগঠন।আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) থেকে বান্দরবানের সদর, আলীকদম, লামা, এবং নাইক্ষ্যংছড়ি-এ চারটি উপজেলায় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেওয়া হয় বান্দরবান জেলা প্রশাসনের আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে।
প্রেসব্রিফিংয়ের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন এ ঘোষণা প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পুলিশ সুপার শহীদুল্লাহ কাওছার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মঞ্জুরুল হক, হোটেল ও রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন এবং জেলা রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন।
সরকারি সিদ্ধান্ত ও পর্যটকদের নির্দেশনা
জেলা প্রশাসক জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটনশিল্প এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার চারটি উপজেলায় পর্যটন উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা, থানচি এবং রোয়াংছড়ি উপজেলাগুলোতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। এসব স্থানে ভ্রমণে সরকার পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করেছে।
জেলা প্রশাসক পর্যটকদের পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পর্যটকরা যেন পরিবেশ নষ্ট না করেন এবং ভ্রমণের স্থানে বর্জ্য ফেলে না আসেন।” পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পর্যটন স্পটগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।
বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসায়ীরা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচটি খাতে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন। জেলা পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে এই ছাড় ঘোষণা করা হয়, যাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- আবাসিক হোটেলে ৩৫% ছাড়
- রিসোর্টে ২৫% ছাড়
- খাবারের হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ১০% ছাড়
- পর্যটকবাহী জীপ, কার, মাইক্রোবাসে ২০% ছাড়
- সিএনজি ও মাহিন্দ্রায় (থ্রি-হুইলার) ২০% ছাড়
এই ঘোষণা বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) হোটেল গ্র্যান্ড ভ্যালীর কনফারেন্স কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে দেন হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: জসিম উদ্দিন।
মেঘনা পর্যটন কেন্দ্র
সরকারি পর্যটন কেন্দ্রেও ছাড়ের সম্ভাবনা
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানান, নিলাচল, নীলগিরি, প্রান্তিলেক, এবং মেঘলার মতো সরকারি পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা শীঘ্রই আসতে পারে। বান্দরবানের পর্যটনশিল্পের পুনরুত্থান এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য তারা গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কারণ
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন উল্লেখ করেন, জেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পর্যটন নিষেধাজ্ঞা চারটি উপজেলা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় তিন উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে।
উপসংহার
পাহাড়ি অঞ্চলের চলমান অস্থিরতা শিথিল হওয়ায় এবং সর্বদিক বিবেচনায়, পর্যটন খাতকে পুনরায় চাঙ্গা করতে দীর্ঘ এক মাস ধরে চলা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে পর্যটকদের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত করা হয়েছে বান্দরবান।
আপনার মতামত লিখুন :