বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কেন নিষিদ্ধতার চাদরে ঘেরা তিব্বত এবং লাসা শহর!

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ০৪:৫০ পিএম

কেন নিষিদ্ধতার চাদরে ঘেরা তিব্বত এবং লাসা শহর!

সৌন্দর্যের আধার নিষিদ্ধ তিব্বত। ছবি: সংগৃহীত

বহুকাল ধরেই মানুষের আকর্ষণ এবং রহস্যময়তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে লাসা শহর এবং তিব্বত। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্ভোগ, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে তিব্বত বিশ্বের কাছে এক নিষিদ্ধ এবং রহস্যময় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। তিব্বত চীনের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হিসেবে স্বীকৃত হলেও তিব্বতের রাজধানী লাসা শহরটি বিশ্বের কাছে অনেকটাই অজানা এবং দুর্গম।

তিব্বত ও লাসা শহর নিষিদ্ধতার কারন

তিব্বতকে নিষিদ্ধ অঞ্চলের তকমা দেওয়ার পেছনে তার প্রাকৃতিক অবস্থান ও উচ্চতা বড় একটা কারণ। হিমালয়ের উত্তর দিকে অবস্থিত এই অঞ্চল প্রায় ১৬,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, যেকারনে একে পৃথিবীর অন্যতম উচ্চতম ভূমি বলা হয়। অন্যদিকে পৃথিবীর ছাদ নামে পরিচিত লাসার অবস্থান ১১,৯৭৫ ফুট উচ্চতায়। এই অস্বাভাবিক উচ্চতায় কেউ অভ্যস্ত না থাকলে তার শ্বাস নিতে অসুবিধা হবেই এবং তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়ায় টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পরবে। তিব্বত বছরের প্রায় আট মাস তুষারাবৃত থাকে বলে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও অপ্রতুল। ফলে এটি সবসময় মানুষের নাগালের বাইরেই থাকে।

নিষিদ্ধ লাসা শহর

তিব্বতের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আচার

তিব্বত বহু শতাব্দী ধরে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। লাসা শহরের নামের অর্থই ‍‍`ঈশ্বরের স্থান‍‍`। এই শহরজুড়ে তিব্বতিদের পবিত্র মন্দির, মঠ এবং ঐতিহাসিক প্রাসাদ রয়েছে। সেখানকার দালাই লামার শীতকালীন আবাস পোটালা প্রাসাদ আজও এক ঐতিহ্যবাহী এবং পবিত্র স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হয়। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি এই শহরের গভীর নিষ্ঠা লাসাকে একটি পবিত্র ও গোপনীয় শহর হিসেবে পরিচিত করেছে।

তিব্বতের শিল্প ও সংস্কৃতি

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সীমাবদ্ধতা

চীনের সাথে তিব্বতের রাজনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। ১৯৫১ সালে তিব্বত চীনা কমিউনিস্টদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। যদিও ১৯৫৯ সালে দালাই লামার নেতৃত্বে তিব্বতিরা স্বাধিকার আন্দোলন শুরু করে, কিন্তু তা সফল হয়নি। এর পর থেকেই তিব্বতের উপর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরোপিত হয়। যার কারনে তিব্বত এবং লাসা শহরে ভ্রমণের জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে অনুমোদন প্রদানের হার খুবই কম। মূলত এই সকল প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক কারনেই লাসা শহরকে নিষিদ্ধ নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

তিব্বতের রহস্যময়তার প্রতি আকর্ষণ

অত্যন্ত দুর্গম এবং রহস্যময় তিব্বত প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের মানুষের মনে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। উচ্চ পার্বত্য এলাকা, বরফে ঢাকা প্রান্তর এবং বিচ্ছিন্ন জীবনযাত্রার কারণে তিব্বতের মানুষগুলো আলাদা ও স্বতন্ত্র জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তিব্বতিদের জীবনের এই বৈচিত্র্যময়তা এবং নিষিদ্ধতা পর্যটকদের আরো বেশি আকর্ষণ করে আসছে।

বর্তমানে তিব্বত ভ্রমণ

১৯৮০ সালে তিব্বতের ওপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করা হয় এবং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্লেন, ট্রেন বা সড়কপথেও লাসা এবং তিব্বতের কিছু অংশে ভ্রমণ করা সম্ভব হলেও সীমাবদ্ধতা রয়েই গেছে। এমনকি লাসার কিছু কিছু এলাকা এখনো সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। তিব্বতের প্রাকৃতিক ও নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য পর্যটকদের আকর্ষণ করলেও সবার জন্য এটি এখনও পুরোপুরি উন্মুক্ত নয়।

তিব্বতের প্রধান দর্শনীয় স্থানসমূহ

লাসার পোটালা প্রাসাদ, তা চাও মন্দির, এবং সেলা মন্দির শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এছাড়াও তিব্বতের পূর্বাঞ্চলে লিন শি, ইয়ারলাং চাংপু গ্রান্ড ক্যানিয়ন, এবং দক্ষিণে সাং ইয়ে মন্দির দর্শনীয়। তিব্বতের উত্তরাঞ্চলে আছে নামটসো এবং ইয়াং পা চিং।

উপসংহার

তিব্বতের প্রাকৃতিক বৈরিতা, ধর্মীয় আচার, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার মিশ্রণে তিব্বত এবং লাসা আজও একটি রহস্যময় এবং নিষিদ্ধ অঞ্চল। বিশ্ববাসীর কাছে কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও এর প্রাকৃতিক এবং মানবিক সীমাবদ্ধতা এটিকে বিশেষ এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

 

Link copied!

সর্বশেষ :