ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের মহিষমারি এলাকায় ৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই নৃশংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীরা পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন। শিশুটির মরদেহ কুলতলী এলাকার একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ঘটনার বিবরণ:
শুক্রবার বিকেলে চতুর্থ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারে যায়। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও সে বাড়ি ফেরেনি। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা খোঁজ শুরু করেন। খোজ না পেয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে স্থানীয় মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে তাদের জয়নগর থানায় যেতে বলা হয়। কিন্তু সেখানেও পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে গ্রামবাসীরা পুলিশের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
মরদেহ উদ্ধার ও উত্তেজনা:
পরের দিন সকালে পার্শ্ববর্তী কুলতলী এলাকার একটি জলাশয় থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় গ্রামবাসীদের মধ্যে অসন্তোষ আরও তীব্র হয়। ফলে তারা মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে তা ভাঙচুর করে এবং বাইক ও সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।
অভিযুক্ত গ্রেপ্তার ও তদন্ত:
এ ঘটনায় একজন ১৯ বছর বয়সী যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি পুলিশের কাছে অপরাধ স্বীকার করেছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে, শিশুটির মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত সঠিকভাবে হওয়া এবং প্রমাণ লোপাট না হওয়ার দাবি তুলেছেন স্থানীয় নেতারা। বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল এবং সিপিএমের মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় সহ রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহ সংরক্ষণ এবং ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
বিচারের দাবি:
রাজ্যজুড়ে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি শিশুটির জন্য সুবিচারের দাবিতে একত্রিত হয়েছেন। তারা পুলিশের প্রতি উদাসীনতার অভিযোগ তুলে দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং সঠিক তদন্তের দাবি করছেন। শিশুটির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তারা বলছেন যে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই ঘটনাটি শুধু জয়নগর বা দক্ষিণ ২৪ পরগনা নয়, সারা রাজ্যে শিশু অধিকার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :