বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে তাকে। রাত ৩টার দিকে হলের দ্বিতীয় তলা থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আবরার ফাহাদ বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি ও গ্যাস চুক্তির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার। ওই দিনই শেরেবাংলা হলের গেস্টরুমে আসামিরা সভা করে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। স্ট্যাটাস দেওয়ার সময় তিনি কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পরের দিন বিকালে তিনি বুয়েটের হলে ফিরে আসেন। হলে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাত ৮টার দিকে আবরারসহ দ্বিতীয় বর্ষের আরও সাত-আটজন ছাত্রকে শেরেবাংলা হলের দোতলার ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত-আটজন নেতা।
তারা আবরার ফাহাদের মোবাইল নিয়ে ফেইসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখেন এবং তাকে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনেন। আবরার এই অভিযোগ অস্বীকার করলে তাকে স্টাম্প দিয়ে পেটানো শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর চতুর্থ বর্ষের আরও কয়েকজন নেতাকর্মী এসে তাকে আবারও নির্যাতন করে। মার খেয়ে এক পর্যায়ে আবরার অচেতন হয়ে পড়লে তাকে কোলে করে মুন্নার কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মধ্যবর্তী জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসার জন্য হল প্রভোস্ট ও ডাক্তারকে খবর দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। তবে চিকিৎসক এসে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়।
আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আদালত ২০ জনের ফাঁসির আদেশ দেন এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
আবরারের মা রোকেয়া খাতুন দ্রুত এই রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের ফাঁসি দাবি করেছেন। আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, তিনজন আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন এবং তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন:
১. বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৩তম ব্যাচ), ২. সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ),
৩. তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ),
৪. সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ),
৫. ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ),
৬. উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ),
৭. সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ),
৮. সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ),
৯. সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ),
১০. শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ),
১১. মাজেদুল ইসলাম (মেটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ),
১২. খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ),
১৩. মাহমুদুল জিসান (ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ),
১৪. এ এস এম নাজমুস সাদাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ),
১৫. মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭তম ব্যাচ),
১৬. মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬ ব্যাচ),
১৭. শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং),
১৮. উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল),
১৯. মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল),
২০. সদস্য মুজাহিদুর রহমান (ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ)।
এদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন মাহমুদুল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, এবং মুজতবা রাফিদ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন:
১. বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং),
২. গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ),
৩. আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং),
৪. সদস্য আকাশ হোসেন (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ),
৫. মোয়াজ আবু হোরায়রা (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৭ ব্যাচ)।
আপনার মতামত লিখুন :