ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি নিজের মেয়ে বুশরা আফরিনকে ‘চিফ হিট অফিসার’ হিসেবে বিনা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় মেয়েকে মাসে ৮ লাখ টাকা বেতনও দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় দায়েরকৃত তিনটি হত্যা মামলার শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাংবাদিকদের সামনে এই বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এই তথ্য প্রকাশ্যে আসে।
আতিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার এবং অভিযোগসমূহ
গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় মহাখালী এলাকা থেকে আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে। তাদের মধ্যে আতিকুল ইসলামও ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির মধ্যে অন্যতম হলো আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করা। বিশেষ করে তার মেয়ে বুশরা আফরিনকে বিনা বিজ্ঞপ্তিতে চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাকে ৮ লাখ টাকা মাসিক বেতন প্রদান।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন আতিকুল ইসলাম নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজের মেয়েকে নিয়োগ দিয়ে তার মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয় করেছেন। তারা আরো বলেন, বুশরা আফরিন নামমাত্র কয়েকটি গাড়ি দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে তিনি হিট কমাচ্ছেন। এছাড়াও আতিকুল ইসলাম ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক আত্মীয়কে ডিএনসিসির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর অভিযোগ তোলেন তারা।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং অন্যান্য অভিযোগ
আইনজীবীরা আরো উল্লেখ করেন যে, আতিকুল ইসলামের মেয়াদকালে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ঢাকা উত্তরে। মশা নিধনের জন্য আনা ওষুধ নিয়েও তিনি দুনম্বরি করেছেন। আতিকুলের এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে নকল ওষুধ আনা হতো। ফলে তারা আতিকুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার প্রস্তাবও করেন।
জামিন নামঞ্জুর এবং আদালতের সিদ্ধান্ত
আইনজীবীরা আতিকুল ইসলামের জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, তিনি পালিয়ে গিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারেন। আদালত তাদের বক্তব্য শোনার পর আতিকুল ইসলামের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চিফ হিট অফিসার পদ নিয়ে বিতর্ক
এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এশিয়ার প্রথম চিফ হিট অফিসার হিসেবে বুশরা আফরিনকে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে ডিএনসিসিতে এমন কোনো পদ না থাকায় বুশরা এখানে কোনো অফিস করেননি এবং ডিএনসিসি থেকে কোনো বেতনও নেননি বলে জানা যায়। তবুও তার মাসিক ৮ লাখ টাকা বেতন নিয়ে বিতর্ক চলছেই।
উপসংহার
আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় ধাক্কা হিসেবে ধরা হচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ, সরকারি অর্থের অপব্যবহার, এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে তাকে আদালতের সামনে জবাবদিহি করতে হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :