বাংলাদেশের ইতিহাসে পিটিয়ে হত্যা নতুন কিছু নয়। হুজুগে পরে, বাছবিচারহীন ভাবে নিরপরাধ মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা যেন এদেশের বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে এক মজার খেলা। পিটিয়ে হত্যার ঘটনা আগেও ঘটেছিল আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে। উত্তর বাড্ডায় ছেলে ধরার অভিযোগে শত শত মানুষ নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল তাসলিমা বেগম রেনুকে। অভিযুক্তকে একটা বারের জন্য সুযোগ দেয়া হয় নি সত্যতা প্রমানের। পাঁচটা বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার হয় নি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের।
মা কে ছাড়া রেনুর ৯ বছর বয়সী মেয়ে তুবা এবং ১৬ বছর বয়সী মাহিরের এখনো নির্ঘুম রাত কাটে। বড়সড় গন্ডগোল দেখলে তারা এখনো ভীত হয়ে পরে। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে খালা নাজমার কাছে বড় হচ্ছে তারা।
মায়ের মৃত্যুর সময় তুবার বয়স ছিলো মাত্র ৪ বছর। তার স্মৃতিতে মাকে নিয়ে কাটানো সময় খুবই অল্প কিন্তু ভুলতে পারেনি মাহির। সে তার মায়ের হত্যাকাণ্ডের জ্বলজ্বলে অগ্নিসাক্ষী। পাঁচ বছর ধরে তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এই নিষ্ঠুর স্মৃতি। প্রায়ই তার মনে পরে মায়ের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো।
রেনুর বড় বোন নাজমা মায়ের মতই স্নেহভরে লালন পালন করছেন মা হারা দুই শিশুকে, তাদের নিয়ে দেখছেন তার মৃত বোনের দেখা স্বপ্নগুলো। তবে এতগুলো বছর পার হলেও বোনের হত্যার বিচার না পেয়ে তিনি রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার প্রতি ক্ষুব্ধ।
রেনুর ভাগ্নে নাসির উদ্দিন জানান তারা এখনো রেনু হত্যার মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।এমনকি মামলা চালাতে গিয়ে মাঝেমধ্যে তারা অর্থ কষ্টেও পরেছেন৷ কিন্তু এই ছোট ছোট দুই শিশুর মুখের দিকে তাকালে তারা ভুলতে পারেন না সেই নির্মম দিনের কথা। এখনো তারা রাষ্ট্রের কাছে রেনু হত্যার সুষ্ঠু বিচারের আশা করেন।
মব জাস্টিসের নামে এই উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সরকার এখনো সুষ্ঠু আইন ও বিচার ব্যবস্থা বলবৎ না করতে পারলে আরো অনেক নিরিহ রেনু, আবরার ফাহাদ এবং তোফাজ্জল মারা যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :