বাংলাদেশ সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা: ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা: ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

মুক্তিযোদ্ধাকে জুতোর মালা পরিয়ে লাঞ্ছনা। ছবি: সোস্যাল মিডিয়া

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় তুলেছে। মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে মানহানিকর আচরণের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিস্তারিত ঘটনা

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে অপমানিত করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাঁকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন। এমনকি গ্রামবাসীর সামনে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করা হয়। ঘটনার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়।

প্রশাসনের পদক্ষেপ

প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা

ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, "এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।" স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। তবে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

আবদুল হাই কানু কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে একসময় এলাকায় প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। তবে পরবর্তীতে রাজনৈতিক মতভেদের কারণে তাঁর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। এলাকার জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে এলাকায় প্রভাব বিস্তার, বিরোধীদের দমন এবং একটি হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছে।

মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের বক্তব্য

আবদুল হাইয়ের পরিবারের দাবি, "তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাঁকে এলাকা ছাড়ার জন্য বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।"

সরকার ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষায় সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আরও বলা হয়, "মুক্তিযোদ্ধারা জাতির গর্ব। তাঁদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।" পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। প্রশাসন দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মহলে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

শেষ কথা 

এ ঘটনা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বাঙ্গালী জাতির শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ পুনরায় মনে করিয়ে দেয়। এ জাতি মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি জাতিকে আশ্বস্ত করেছে। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।


 

Link copied!

সর্বশেষ :