দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি আওয়ামী জোটের অন্যতম নেতা এবং ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ গঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। মেননের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন।
মেননের অভিযুক্ত সম্পদের বিবরণ
মেননের নামে দেশে এবং বিদেশে বিপুল সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সম্পদ হলো:
- লন্ডনে ২৫টি বাড়ি (মোট আনুমানিক মূল্য ৮ হাজার কোটি টাকা)
- কানাডায় স্ত্রীর নামে ৫টি বাড়ি (প্রায় ১২০ কোটি টাকা)
- আমেরিকায় ২টি বাড়ি এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার
এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় মেননের ফ্ল্যাট এবং জমির মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে:
- গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট (মোট মূল্য ১৫ কোটি টাকা)
- বনানীতে ২টি ফ্ল্যাট (প্রায় ৯ কোটি টাকা)
- ঢাকার আশেপাশে ৪৫০ কোটি টাকার জমি, যার মধ্যে পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট এবং কেরাণীগঞ্জে একটি রিসোর্ট রয়েছে।
মেননের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও দুর্নীতির ধরন
মেননের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো মূলত সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের ওপর ভিত্তি করে। তার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্নীতির ধরন নিচে তুলে ধরা হলো:
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দুর্নীতি
মেনন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে (২০০৯-২০১৬) নিয়ম ভঙ্গ করে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ এবং পদোন্নতি দিয়েছেন। এই নিয়োগ ও পদোন্নতি থেকে মোট প্রায় ২০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও দায়িত্ব পালনকালে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি বাণিজ্য এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেন, যার পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
- সরকারি দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি:
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী এবং বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন টেন্ডার বাণিজ্য, স্বর্ণ চোরাচালান এবং বিমান ক্রয়ে দুর্নীতি করেন, যার মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
মেনন এর বর্তমান পরিস্থিতি
মেনন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে তাকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত এবং বর্তমানে কয়েক দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন। দুদক তার বিরুদ্ধে পাওয়া সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, মেননের বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হবে।
উপসংহার
দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ রাশেদ খান মেননের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মোড়। দুদক তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :