এনএসআইয়ের তিন কর্মকর্তা বিদেশে পালালেন | রাষ্ট্রীয় গোপন নথি পাচার ও ড. ইউনূসকে হয়রানির নেপথ্যের কাহিনি
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই)-এর তিন কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এদের মধ্যে দুজন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (RAW)-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নথি চুরি করে বিদেশে পাচার করেছেন। এ ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার ভেতরে রহস্য ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।পালিয়ে যাওয়া কর্মকর্তারা হলেন—
যুগ্ম পরিচালক বদরুল আহমেদ (বিদ্যুৎ)
উপ-পরিচালক আমিনুল হক পলাশ
সহকারী পরিচালক তানভীর হোসেন খন্দকার
আমিনুল হক পলাশের লন্ডন পালানোউপ-পরিচালক আমিনুল হক পলাশ বিকল্প পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভারত থেকে ব্রিটিশ ভিসা নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেছেন। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি ও মামলায় জড়ানোর মূল কারিগর ছিলেন। শেখ হাসিনার আমলে ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৬৮টি মামলা সাজানোর দায়িত্বও তার ওপরই ছিল। আদালতে হয়রানি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. ইউনূসের সম্মান ক্ষুণ্ন করা পর্যন্ত নানা কাজে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল।বদরুল আহমেদের ভূমিকাপালিয়ে যাওয়া যুগ্ম পরিচালক বদরুল আহমেদও ‘র’-এর হয়ে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার দায়িত্ব ছিল ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচন ও ২০২৪ সালের ডামি ভোট নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়া, এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টিএম জোবায়েরের বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি দুবাই কনস্যুলেট থেকে পালিয়েছেন।তানভীর হোসেন খন্দকারের জাল সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারিসহকারী পরিচালক তানভীর হোসেন খন্দকার জাল সার্টিফিকেট দিয়ে এনএসআইতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণকালীন সময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মাদক সেবনসহ একাধিক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে। এনএসআই তদন্তে জানা গেছে, তিনি গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। তিনি র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশীদ হোসেনের ছেলে।রাষ্ট্রীয় নথি পাচার ও বিদেশি গোয়েন্দার সঙ্গে যোগাযোগবিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, এই তিন কর্মকর্তা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় তথ্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর কাছে পাচার করেছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন প্রকৌশল এবং ড. ইউনূসকে হয়রানির বিষয়ে তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন।ড. ইউনূসকে হয়রানির নেপথ্যের কাহিনিশেখ হাসিনার নির্দেশে এনএসআইয়ের একটি বিশেষ টিমকে ড. ইউনূসকে মামলায় জড়ানো ও হয়রানির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন আমিনুল হক পলাশ। তার পরিকল্পনায় গ্রামীণ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৬৮টি মামলা করা হয়। আদালতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে, লিফট বন্ধ রেখে তাকে বারবার হয়রানির শিকার করা হয়। বিশ্বের ১৮০ জন নোবেল বিজয়ীসহ অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই হয়রানির প্রতিবাদ জানালেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল।এনএসআইয়ের স্বীকারোক্তি ও পদক্ষেপএনএসআই কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে, তিন কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়েছেন। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং রাষ্ট্রদ্রোহ ও অনিয়মের দায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬-কে ইতোমধ্যে আমিনুল হক পলাশের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
বর্তমান এনএসআই মহাপরিচালক জানিয়েছেন, সংস্থার ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং যারা দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।