বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগের সংখ্যা চারবারে সীমাবদ্ধ করেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, একজন প্রার্থী বিসিএস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ চারবার অংশ নিতে পারবেন। এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বিসিএসে অংশগ্রহণের সীমা তিনবার নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল।
বয়সসীমা নির্ধারণ এবং নতুন নিয়মাবলী
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা এখন থেকে ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নিয়ম স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, ও পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে প্রতিরক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে না। তারা তাদের নিজস্ব নিয়োগ বিধি অনুসারে কাজ করবে।
চাকরিতে আবেদনের বয়স বৃদ্ধির প্রস্তাব
এর আগে, সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি ছেলেদের জন্য ৩৫ বছর এবং মেয়েদের জন্য ৩৭ বছর বয়সসীমার সুপারিশ করেছিল। সরকার সেই সুপারিশ অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই প্রস্তাবের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ তুলে ধরা হয়েছে:
- কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব: মহামারির সময় সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং নতুন নিয়োগ কার্যক্রমও কমে যায়।
- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব: এই যুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে আসে।
- ছাত্ররাজনীতি ও আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী সঠিক সময়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।
বয়স বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক
বয়সসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা দেখা গেছে। সেশনজটের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে ২৭-২৮ বছর লেগে যায়। যা বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে একটি যুক্তি হিসেবে দেখা হয়। অন্যদিকে বিরোধীরা দাবি করেন বৃদ্ধ বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করা কর্মজীবীরা নতুন কিছু দিতে পারবেন না এবং দীর্ঘ পরীক্ষা প্রক্রিয়া শেষে তারা চাকরিতে যোগদানের সময় প্রায় ৪০ বছর বয়সী হয়ে যান।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার ইতিহাস
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩২ বছর। তবে এটি আগে এটি ছিল ২৭ বছর। যা ১৯৯১ সালে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়। তখন অবসরের বয়সসীমাও পরিবর্তিত হয়ে সাধারণ ৫৯ বছর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ৬৫ বছর এবং উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্য ৬৭ বছর হয়।
আপনার মতামত লিখুন :