বাংলাদেশ রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে, যুদ্ধের শঙ্কা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে, যুদ্ধের শঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যা এখন বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের খবর আসছে ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে। জম্মু-কাশ্মিরের লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

জম্মু ও কাশ্মিরের পুঞ্চ এলাকায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বুধবার যুদ্ধবিরোধী চুক্তি লঙ্ঘন করে এলোমেলোভাবে গুলি চালানো হয়। পাকিস্তানের এলোপাথাড়ি গুলির পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সীমান্তের বিভিন্ন অংশে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়েছে এবং এতে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংঘর্ষে উভয় পক্ষই উল্লেখযোগ্য ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

উভয় দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দেবে। অন্যদিকে ভারত সরকারও তাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, "পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে উসকানি দিচ্ছে। আমরা এর যথাযথ জবাব দেব।" পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও পাল্টা অভিযোগ আনা হয়েছে যে ভারত অযথা উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।

কাশ্মির ইস্যু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের প্রধান কারণ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই কাশ্মির নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কয়েকবার যুদ্ধ হয়েছে। ২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এর পর থেকে নিয়মিত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও সীমান্ত সংঘর্ষ চলছে।

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সামরিক ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা যেকোনো সময় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই দেশের মধ্যস্থতার চেষ্টা করলেও এখনো পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা প্রায়ই এই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণহানির শিকার হন। তারা দীর্ঘদিন ধরে অস্থির পরিবেশে জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামে আতঙ্কে মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দুই দেশকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার ওপর জোর দিয়েছে।

সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উভয় দেশ যদি নিজেদের অবস্থান থেকে নমনীয় না হয়, তবে যুদ্ধ অনিবার্য হতে পারে।

উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ। তাই দুই দেশের মধ্যে যেকোনো যুদ্ধের প্রভাব শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো বিশ্বেই পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি। সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর মাধ্যমে দুই দেশকেই একটি স্থায়ী সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় সামনের দিনগুলো আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

ভিডিও লিংক এখানে

Link copied!

সর্বশেষ :