বর্তমানে সংকটের মুখোমুখি ভারত ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক। ভারতের কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে কানাডায় হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ, এবং হয়রানির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত ও কানাডার সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
কূটনৈতিক সংঘাতের সূচনা
গত বছর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় শিখ আন্দোলনকর্মী হারদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের পর এই সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। নিজ্জর পাঞ্জাব রাজ্যকে ভেঙে খালিস্তান নামে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। ভারত সরকার নিজ্জরকে কানাডার কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছিল, এত কানাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশ্যে দাবি করেন যে নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে, যা ভারত প্রত্যাখ্যান করে। ভারত কানাডার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তোলে।
নতুন অভিযোগ এবং প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি কানাডিয়ান পুলিশ একটি প্রেস কনফারেন্সে দাবি করে যে ভারতের শীর্ষ কূটনীতিকরা কানাডায় শিখ সম্প্রদায়ের সদস্যদের হত্যা এবং নিগ্রহের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের একটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। কানাডার পুলিশ জানায়, তারা বিশ্বাস করে যে ভারতীয় এজেন্টরা একটি কুখ্যাত মাফিয়া গ্যাংয়ের সদস্যদের সহায়তায় টার্গেট করা ব্যক্তিদের ওপর হামলা ও হত্যার মতো অপরাধ ঘটিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও অভিযোগ করেন যে ভারত সরকারের কর্মকাণ্ড কানাডার জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। তিনি ভারতীয় কর্মকর্তাদের হাতে কানাডিয়ান নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারত এই অভিযোগগুলোকে হাস্যকর বলে অভিহিত করে এবং দাবি করে যে কানাডা সরকার কোন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ দেয়নি। ভারত আরও অভিযোগ করে যে জাস্টিন ট্রুডোর রাজনৈতিক এজেন্ডা খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর সাথে জড়িত।
ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাবনা
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত ও কানাডার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে এবং শীঘ্রই উন্নতি হওয়ার কোন লক্ষণ নেই। কানাডা নিজ্জর হত্যার তদন্ত ফাইভ আইসের সহযোগিতায় পরিচালনা করবে। যুক্তরাষ্ট্রও ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং ঘটনার তদন্তে সাহায্য করছে। এখন দেখার বিষয় আন্তর্জাতিক সমাজের এই ঘটনাপ্রবাহ ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে কতটা প্রভাব ফেলে এবং ভারত সরকারের উপর চাপের মাত্রা কতটুকু বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান কূটনৈতিক টানাপোড়েন বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এছাড়াও যদি মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলে তবে এই সম্পর্কের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।
আপনার মতামত লিখুন :