মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর রাষ্ট্র ইরান সামরিক খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করছে। এবার দেশটি গোপনে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমা দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে সক্ষম বলে দাবি করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান গোপনে এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যা তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই প্রকল্পের নকশায় উত্তর কোরিয়া সহযোগিতা করছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের জাতীয় প্রতিরোধ পরিষদ (NCRI) এর আগেও তেহরানের গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের তথ্য প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) অস্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কেও বিস্তারিত জানিয়েছে।
ফ্রান্স ও আলবেনিয়াভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন এনসিআরআই-এর মার্কিন প্রতিনিধি সোনা সামসামি বলেছেন,
"ইরানের শাসকরা পশ্চিমাদের নমনীয়তার সুযোগ নিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে। এটি বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।"
তিনি আরও দাবি করেন,
"তেহরান বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল, তাই তারা দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছে। এটি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার পাশাপাশি ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটকেও বাড়িয়ে তুলছে।"
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানের শাহরুদ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্র গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অর্গানাইজেশন ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স রিসার্চ (NPNDI) এবং IRGC-এর মহাকাশ বাহিনীর বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এখানে পারমাণবিক ওয়ারহেড সংযোজনের কাজ চলছে, যা ঘাম-১০০ নামক রকেটে সংযুক্ত হবে। ফলে এটি ইউরোপের গ্রীসসহ ৩,০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়, তবে এটি ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি ইসরায়েলের জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
- মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি: ইরানের অস্ত্র সক্ষমতা বৃদ্ধি মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করতে পারে।
- ইসরায়েলের উদ্বেগ: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের সামরিক শক্তি বাড়ানো নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
- যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া: পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমারা ইরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে আছে। নতুন করে যদি দেশটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যায়, তবে তা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক মহল কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায় এবং এই অভিযোগের সত্যতা কতটা প্রতিষ্ঠিত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :