স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যতিক্রমী এবং রহস্যময় পোস্ট করে থাকেন। তবে সম্প্রতি ১৯৫৩ সালের একটি বইয়ে ‘ইলন’ নামে মঙ্গলের নেতার কথা উল্লেখ থাকায় তিনি সত্যিই অবাক হয়েছেন। টুইটারের (বর্তমানে এক্স) এক ব্যবহারকারী এই তথ্য শেয়ার করার পর মাস্ক নিজেও প্রতিক্রিয়া জানান, যা নিয়ে প্রযুক্তি এবং মহাকাশপ্রেমী মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
১৯৫৩ সালের বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী:
একজন এক্স ব্যবহারকারী পোস্টে উল্লেখ করেন, বিখ্যাত জার্মান রকেট বিজ্ঞানী ভার্নার ভন ব্রাউন তার ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত বই "The Mars Project"-এ লিখেছিলেন যে, মঙ্গলের নেতা ‘ইলন’ নামে পরিচিত হবে। প্রথমে অনেকে বিষয়টিকে গুজব মনে করলেও কিছু গবেষক বইটির মূল জার্মান পান্ডুলিপি ঘেঁটে দেখেন, সত্যিই সেখানে `Elon` শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বইয়ের সেই অংশের অনুবাদে বলা হয়েছে:
"...এই প্রতিজ্ঞা এবং দায়িত্ববোধই মঙ্গল সভ্যতার বিকাশের মূল চালিকাশক্তি ছিল। ব্যবস্থাপনা গঠিত ছিল দশটি জাহাজের, যার নেতৃত্বে ছিল একজন ব্যক্তি, যাকে ‘ইলন’ নামে ডাকা হতো এবং যার কার্যকাল ছিল পাঁচ বছর। তবে ইলন ও তার মন্ত্রিসভার পাশাপাশি ছিল একটি ফার্লামেন্ট, যা আইন প্রণয়ন করত এবং সরকারের কার্যক্রম নির্ধারণ করত..."
এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইলন মাস্ক স্বয়ং বিষয়টি দেখে অবাক হন এবং মাত্র পাঁচটি শব্দের প্রতিক্রিয়া দেন:
"দেখে মনে হচ্ছে ভাগ্য অনিবার্য।"
ইলন মাস্কের রহস্যময় প্রতিক্রিয়া
মাস্কের এই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। অনেকেই বলতে শুরু করেন, মাস্ক কি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু জানেন? কেউ কেউ আবার মজা করে প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি কি আদৌ মানব?
একজন এক্স ব্যবহারকারী মজা করে লিখেছেন,
"হয়তো আপনি একজন টাইম ট্রাভেলার!"
উত্তরে ইলন মাস্ক লিখেছেন,
"আমি যতবারই বলি যে আমি ৫০০০ বছর পুরোনো একজন ভিনগ্রহী টাইম ট্রাভেলার, কেউই আমাকে বিশ্বাস করে না।"
এই মন্তব্য আরও বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, মাস্ক মজা করছেন, আবার অনেকে মনে করছেন, তিনি ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু বলতে চেয়েছেন।
‘The Mars Project’ বই সম্পর্কে:
‘দ্য মার্স প্রজেক্ট’ বইটি এমন এক সময় লেখা হয়েছিল, যখন মহাকাশ ভ্রমণকে শুধুই কল্পবিজ্ঞান মনে করা হতো। বইটিতে জার্মান বিজ্ঞানী ভার্নার ভন ব্রাউন মহাকাশ ভ্রমণের সম্ভাবনা এবং তখনকার প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় এই বইটিকে "স্পেস ট্রাভেলের এক ক্লাসিক" বলে বর্ণনা করেছে। এটি এমন এক যুগের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, যখন রকেট বিজ্ঞানী ভন ব্রাউন বিশ্বাস করতেন, একদিন মানুষ মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাবে এবং সেখানে একধরনের শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
এই মিল কাকতালীয় নাকি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত?
এই প্রশ্ন নিয়েই এখন বিতর্ক চলছে।
কাকতালীয় কারণ:
- অনেক সময় নামের মিল দেখা যায়, যা নিছক কাকতালীয় হতে পারে।
- ‘ইলন’ নামটি অনন্য হলেও এটি একেবারে বিরল নয়।
- ভন ব্রাউন বইটি যখন লিখেছিলেন, তখন ভবিষ্যতের কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নিয়ে ভাবেননি, বরং একটি কাল্পনিক উপাধি ব্যবহার করেছিলেন।
ভবিষ্যদ্বাণীর যুক্তি:
- ভন ব্রাউন ছিলেন নাসার রকেট প্রকৌশলের অন্যতম পথিকৃৎ। তার লেখা অনেক বিষয় বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
- ইলন মাস্ক আজ সত্যিই মঙ্গলে মানুষের বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছেন এবং তার কোম্পানি স্পেসএক্স সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।
- যদি ভবিষ্যতে মাস্কের নেতৃত্বে মঙ্গল উপনিবেশ গড়ে ওঠে, তাহলে এই বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া:
বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে:
- "আপনি কি ভিনগ্রহের প্রাণী?"
- "মঙ্গল একদিন ইলন মাস্কের হাতেই পড়বে!"
- "এটা নিছক কাকতালীয় নয়, হয়তো কোনো ভবিষ্যদ্বাণী!"
- "ভিনগ্রহী মাস্ক, আপনি সত্য লুকাচ্ছেন!"
অনেকে মজা করলেও অনেকে সত্যিই বিশ্বাস করেন, ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করা এবং একই নামে ভন ব্রাউনের বইতে উল্লেখ থাকাটা নিছক কাকতালীয় হতে পারে না।
ইলন মাস্ক কি সত্যিই মঙ্গলের নেতা হবেন?
মাস্ক নিজেই বহুবার বলেছেন, তিনি চান মানুষ বহুজাতিক জীব (multi-planetary species) হোক। তার প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ইতিমধ্যেই মঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২0 সালে তার Starship প্রকল্প ঘোষণা করার পর তিনি বলেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে তিনি লক্ষাধিক মানুষকে মঙ্গলে পাঠাতে চান।
এখন যদি ভবিষ্যতে ইলন মাস্ক মঙ্গলে মানুষের প্রথম উপনিবেশ গড়ে তোলেন এবং সত্যিই সেখানে শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাহলে কি তাকে ‘মঙ্গল নেতা ইলন’ বলা হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে। তবে এখন পর্যন্ত এই ঘটনাটি রহস্যময় এবং অদ্ভুত এক কাকতালীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিছু মানুষের কাছে এটি নিছক মজা হলেও, মহাকাশ গবেষণা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিক থেকে দেখলে এটি এক যুগান্তকারী বিষয় হতে পারে।
শেষ কথা:
ইলন মাস্কের স্পেসএক্স, মঙ্গল মিশন, এবং তার নামের সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণীর এই মিল সত্যিই অবাক করার মতো। এটি হয়তো নিছক কাকতালীয়, নাকি সত্যিই ইতিহাসের কোনো ইঙ্গিত—এটি নিয়ে বিতর্ক চলবে।
তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—ইলন মাস্ক তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলে, ইতিহাসে তার নাম চিরকাল মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :