ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী রতন টাটা গত ৯ অক্টোবর না ফেরার দেশে চলে যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তার মৃত্যুতে ভারত তথা পুরো বিশ্বের ব্যবসা জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। ৬ দশকের অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা তিনি টাটা গ্রুপকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তা সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
স্বাভাবিকভাবেই তার মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে কে হতে পারেন এই বিশাল সাম্রাজ্যের পরবর্তী উত্তরাধিকারী?
টাটা ফ্যামিলি ট্রি
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মায়া টাটা
রতন টাটা সারা জীবন অবিবাহিত ছিলেন। তার উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল বহুদিন ধরেই। তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য বিভিন্নভাবে টাটা গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তবে এবার বিশেষভাবে উঠে আসছে মায়া টাটার নাম। মায়া রতন টাটার সৎ ভাই নোয়েল টাটার কন্যা। টাটা গ্রুপের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসেবে ৩৪ বছর বয়সী মায়া টাটার সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিলো। রতন টাটার মৃত্যুর পর সেই আলোচনা আরো একবার জোরালো হয়েছে।
মায়া টাটার পারিবারিক পরিচয় ও ব্যবসায়িক সংযোগ
মায়া টাটার মা আলো মিস্ত্রী ভারতের আরেক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য। মায়ার নানার পরিবার, বিশেষ করে প্রয়াত বিলিয়নিয়ার পালোনজি মিস্ত্রী টাটা গ্রুপের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। এছাছাও টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রীও মায়ার মামা। সাইরাস মিস্ত্রী ২০২২ সালে মারা যান। তিনিও এক সময় রতন টাটার কাছের মানুষ ছিলেন।
মায়া টাটা বর্তমানে টাটা মেডিক্যাল সেন্টার ট্রাস্টের বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তার পাশাপাশি তার বোন লিয়াহ ও ভাই নেভিলও এই বোর্ডে রয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের বায়েস বিজনেস স্কুল থেকে পড়াশোনা করা মায়া তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন টাটা অপরচুনিটিস ফান্ডে। এরপর তিনি কাজ করেছেন টাটা ডিজিটালে এবং বর্তমানে তিনি টাটা গ্রুপের ক্যান্সার হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।
রতন টাটার কতটা কাছের মানুষ মায়া টাটা!
মায়া টাটা রতন টাটার সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন তা খুব বেশি জানা যায় না। তবে তার দক্ষতা ও ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা তাকে টাটা গ্রুপের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে দেখতে অনেকেই আশাবাদী। ব্যবসা জগতের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে মায়া টাটার নামই উঠে আসছে রতন টাটার বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বে।
রতন টাটার জীবনের মূল্যবোধ
রতন টাটা তার জীবনে মূল্যবোধ এবং আত্মমর্যাদার প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার দাদি লেডি নাভাজবাই তাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে হয়। রতন টাটা তার দাদির স্নেহে বড় হয়েছেন এবং তার মূল্যবোধ আজও তাকে চালিত করে।
রতন টাটার জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো তার প্রেমের গল্প। লস অ্যাঞ্জেলেসে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি সেখানে কাজ শুরু করেন। তখনি এক বিদেশীনির প্রেমে পড়েন রত্ন টাটা। এমনকি তাদের সম্পর্ক এতটাই গভীর ছিলো যে তা বিয়ে পর্যন্ত গড়ানোর কথা হয়েছিল। কিন্তু পারিবারিক কারণে তাকে ভারতে ফিরে আসতে হয় এবং সেই সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।
এরপর আর তিনি নিজেকে জড়াননি কোনো সম্পর্কে। থেকেছেন চিরকুমার।
রতন টাটার এই ব্যক্তিগত জীবনের গল্প তার মানবিক দিকটিকে আরও বেশি ফুটিয়ে তোলে এবং তার নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞার পেছনের মানুষটিকে চেনার সুযোগ দেয়। তার উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনা চলতে থাকলেও তার মূল্যবোধ ও নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :