বাংলাদেশে কৃষিপণ্য পরিবহন এর জন্য কম খরচে ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’ চালু হলেও প্রথম দিনেই ফাঁকা লাগেজ নিয়ে স্টেশন ছাড়তে হলো ট্রেনটিকে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনটি সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহের অভাব এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে প্রথম দিনেই শূন্য বগি নিয়ে ট্রেনটি ঢাকার পথে ছুটতে হয়।
কৃষিপণ্য পরিবহনের সুযোগ ও ভাড়া
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রহনপুর-ঢাকা রুটে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন-এ পাঁচটি লাগেজ ভ্যান রাখা হয়েছে, যার মধ্যে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া সাধারণ চারটি ভ্যানে শাকসবজি, ফল, হিমায়িত মাছ, মাংস এবং দুধ পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। ভাড়ার দিক থেকে সুবিধাজনক করতে প্রতিকেজি কৃষিপণ্যের পরিবহন খরচ রাখা হয়েছে মাত্র ১ টাকা ৩০ পয়সা। যাত্রীদেরও ঢাকায় যাওয়ার সুবিধা রয়েছে এবং বিনামূল্যে যেতে পারবেন কৃষকরা।
ব্যবসায়ীদের আগ্রহের অভাব ও প্রতিবন্ধকতা
যদিও রেলপথে পরিবহনের মূল ভাড়া কম, তারপরও মাঠ থেকে স্টেশনে আনতে এবং স্টেশন থেকে মোকামে পৌঁছাতে বাড়তি খরচ যুক্ত হওয়ায় ট্রেনের তুলনায় সড়কপথে ট্রাকে পণ্য পরিবহন তুলনামূলক সাশ্রয়ী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ট্রাকে পরিবহন খরচ যেখানে প্রতিকেজিতে দুই থেকে আড়াই টাকা সেখানে রেলপথে কুলি এবং অন্যান্য পরিবহন খরচ মিলে তিন টাকারও বেশি পড়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন এর সময় নির্ধারণও একটি প্রধান সমস্যা। সকালের পরিবর্তে সন্ধ্যা বা রাতে ট্রেন চলাচল করলে কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হতো। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীরা দিনের শেষের পণ্য সংগ্রহ করে রাতভর পরিবহন করতে পারতেন যা সকালে ঢাকার মোকামে পৌঁছে বাজারজাত করা সহজ হতো।
প্রথম দিনে শূন্য ট্রেনের যাত্রা
প্রথম দিনেই ট্রেনটি শাকসবজি বা অন্য কোনো কৃষিপণ্য না নিয়ে ফাঁকা বগি নিয়ে রহনপুর থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভিন্ন স্টেশনে বুকিং না থাকার কারণে প্রথম দিনে ট্রেনটি কৃষিপণ্য পরিবহনে ব্যর্থ হয়। শুধুমাত্র ১৫০ কেজি ক্যারেট (সবজির ক্যারেট) পরিবহন করা হয়। যার আয় ছিল মাত্র ৩৬০ টাকা যেখানে ট্রেন পরিচালনার খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৯ লাখ টাকা।
প্রচার-প্রচারণার অভাব ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
অনেক ব্যবসায়ী কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালুর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। রাজশাহীর পাইকারি কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি ফাইজুল ইসলাম জানান, ট্রেনটি চালু হওয়ার কথা তাদের জানানো হয়নি যার ফলে কোনো পণ্য পাঠানোর প্রস্তুতি ছিল না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রচার-প্রচারণার অভাব ছিল এবং কয়েকদিন ধরে কৃষকদের উদ্দেশ্যে প্রচার চালানো হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের সাড়া এখনো পাওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতি সমাধানের প্রস্তাবনা
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ট্রেনটি রাতে পরিচালনা করা হলে তারা বেশি পরিমাণে পণ্য পাঠাতে পারতেন। বিকেল বা সন্ধ্যায় ট্রেনটি চালু হলে চাষিরা পণ্য সংগ্রহ করে দ্রুত ঢাকা পাঠাতে সক্ষম হতেন। এছাড়া স্টেশনে পরিবহন খরচ কমানো এবং কুলিদের ভাড়া নির্ধারণে একটি নির্দিষ্ট নিয়মাবলী থাকলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে রেলপথে পণ্য পরিবহনে আগ্রহ বাড়তে পারে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
পশ্চিম রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, এটি প্রথম দিন ছিল এবং এখনো ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে অনেক কৃষক তাদের পণ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে এটি নিয়মিতভাবে চালু রাখার আশা করছেন এবং এতে সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী।
উপসংহার
কৃষিপণ্য পরিবহনে বিশেষ এই ট্রেনটি সফল করতে হলে ট্রেনের সময় নির্ধারণ এবং পরিবহন খরচসহ অন্যান্য সুবিধাগুলোতে সমন্বয় আনা জরুরি। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের কৃষিপণ্য সহজে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন যার মাধ্যমে সারা দেশের কৃষিখাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :