রমজান মাসে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, খাদ্য, এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আগামী ১ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া রমজানে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সুলভ মূল্যে মাংস, ডিম ও দুধ সরবরাহ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গত সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রমজান মাসে নির্দিষ্ট দামে কিছু নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে প্রতি কেজি ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, প্রতি লিটার পাস্তুরিত দুধ ৮০ টাকা, প্রতি ডজন ডিম ১১৪ টাকা এবং প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ হাজার পিস ডিম, ৬ হাজার লিটার দুধ, ২ হাজার কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস এবং ২ থেকে আড়াই হাজার কেজি গরুর মাংস বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব পণ্য বিক্রির জন্য ঢাকার ২৫টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম চালু থাকবে।
ঢাকার যেসব এলাকায় বেশি জনসমাগম হয়, বিশেষত বস্তি এলাকা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি এমন স্থানগুলোতে এসব পণ্য বিক্রির জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে সচিবালয়, ফার্মগেট, মিরপুরের ষাট ফুট রোড, আজিমপুর মাতৃসদন, নয়াবাজার, বনশ্রী, হাজারীবাগ, আরামবাগ, কড়াইল বস্তি, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, শাহজাদপুর, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা এবং বঙ্গবাজার।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি জোরদার
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার গত সোমবার ডিসি সম্মেলনে জানান, রমজান উপলক্ষে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় মার্চ ও এপ্রিল মাসে ৫০ লাখ পরিবারকে প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল সরবরাহ করা হবে। ঈদের সময় এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। রমজান মাসে মোট ৭ লাখ টন খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হবে।
টিসিবির মাধ্যমে আরও এক লাখ টন চাল এবং ওএমএসের মাধ্যমে আরও এক লাখ টন চাল বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকায় ১২২টি বিক্রয়কেন্দ্র ও ৭০টি ট্রাকের মাধ্যমে এসব পণ্য সরবরাহ তদারকি করা হবে। এসব কার্যক্রম তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়োজিত থাকবেন।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ টাস্কফোর্স
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে তিনটি তদারকি দল গঠন করেছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খানের সভাপতিত্বে এক কর্মশালায় দলনেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। ঢাকা মহানগরের পাশাপাশি জেলা পর্যায়েও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বাজার তদারকি করা হবে।
বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত ছয়টি তদারকি দল পরিচালনা করে। রমজান উপলক্ষে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে। অবৈধ মজুতদারি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ টাস্কফোর্স কাজ করবে।
ডিমের বাজার সহনশীল রাখতে আলাদা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ডিসি সম্মেলনে উঠে আসা বিভিন্ন সুপারিশ যেমন—টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড প্রক্রিয়া দ্রুত পূর্ণাঙ্গ করা, হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির সমস্যা সমাধান, সয়াবিন তেলের সংকট নিরসন এবং দুর্গম অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখার পরিকল্পনা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বাজার তদারকি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন তিনটি দল ঢাকা মহানগরে বাজার তদারকি করবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও কাঁচাবাজার, মুদির দোকান ও সুপারশপগুলোর কার্যক্রম তদারক করবে।
রমজান মাসের জন্য নেওয়া এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখা হবে এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর আর্থিক চাপ কমানো হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকর্তারা।
আপনার মতামত লিখুন :