বাংলাদেশ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

৯ মাসে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১২:১৪ পিএম

৯ মাসে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল

ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক, ৯ মাসে হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা

দেশের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। ২০২২ সালের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। 

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের জন্য নতুন রেকর্ড।

কেন বাড়ছে ঋণ পুনঃতফসিল?

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য নানারকম ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে নতুন নীতিমালা চালু হওয়ার পর ঋণ পুনঃতফসিলের পুরো প্রক্রিয়া ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। আগে পুনঃতফসিল করতে ১০-৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হতো এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য সুবিধা পাওয়া যেত। কিন্তু নতুন নীতিমালায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে চার দফায় ২৯ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং ডাউন পেমেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র আড়াই শতাংশ।

ব্যবসায় মন্দা, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং বর্তমান সরকারের সময় আগের লুকানো তথ্য প্রকাশ পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বেড়েছে।

কোন ব্যাংক কত টাকা পুনঃতফসিল করেছে?

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো—১৭ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো: ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো: ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা
বিদেশি ব্যাংকগুলো: পুনঃতফসিল করেনি

বিদেশি ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিল করছে না কেন?

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদেশি ব্যাংকগুলো সাধারণত ছোট ঋণ দিতে আগ্রহী এবং বড় গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার প্রবণতা কম। ফলে তাদের খেলাপি ঋণ কম হয় এবং পুনঃতফসিলের প্রয়োজন হয় না।

অন্যদিকে, দেশীয় ব্যাংকগুলো বড় গ্রুপের কাছে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয়, যা অনেক সময় খেলাপিতে পরিণত হয়। পরে ব্যাংকগুলো এসব গ্রুপের কাছে গিয়ে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে সমাধান খোঁজে।

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক

 

ব্যাংক কর্মকর্তারা কী বলছেন?

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন,
"সুদহার বৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীরা চাপের মধ্যে আছেন। খরচ বাড়লেও আয় বাড়ছে না। ফলে অনেকে ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন এবং বাধ্য হয়ে পুনঃতফসিল করছেন।"

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন,
"ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় তারা ব্যালেন্স শিট ঠিক রাখতে পুনঃতফসিলের পথ বেছে নিচ্ছে।"

বিশ্লেষকদের মতামত

বিশ্লেষকদের মতে, বারবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়ার পরও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। বরং পুনঃতফসিল করা ঋণের একটি বড় অংশ পরবর্তীতে আবার খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৮.৭০ শতাংশ ঋণ আবারও খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণ পুনঃতফসিলের নিয়ম কঠোর না করা হলে খেলাপির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে, যা দেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

Link copied!

সর্বশেষ :