বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সংকট নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে লুটপাটের মাধ্যমে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন তিন সাবেক গভর্নর— আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে যারা এই খাতকে ধ্বংস করেছেন, তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের গ্রেপ্তারের পর প্রশ্ন উঠেছে— ব্যাংক লুটের হোতাদের বিচার হবে কবে?
তিন গভর্নরের অবস্থা এখন কোথায়?
- আতিউর রহমান : শেখ হাসিনার পতনের পর দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। রিজার্ভ চুরি মামলায় তার পাসপোর্ট ব্লক করা হয়েছে।
- ফজলে কবির : দেশেই থাকলেও জনসমক্ষে নেই।
- আব্দুর রউফ তালুকদার : ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে, দেশে আছেন নাকি বিদেশে, কেউ জানে না।
লুটপাটের ধারা কীভাবে চলেছে?
- সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির দুর্বলতার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
- বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণহীন করে ফেলা হয়েছে, যার ফলে এক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন—
“গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাত ধ্বংসের নেপথ্যে ছিল একটি শক্তিশালী চক্র, যা তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। সবার বিচার নিশ্চিত না হলে, ভবিষ্যতে আবারও একই ঘটনা ঘটবে।”
অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একটি শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
- ব্যাংক খাতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ রয়েছে।
- ব্যাংক খাতকে "ব্ল্যাকহোল" বা কৃষ্ণগহ্বরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ব্যাংকগুলোর ওপর কর্তৃত্ব করেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদি এই লুটপাটে জড়িতদের বিচার না করা হয়, তাহলে আগামীতে আরও বড় অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। ব্যাংক খাতকে রক্ষা করতে শক্তিশালী সংস্কার ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :