মার্কিন ডলারের তুলনায় ভারতীয় রুপির মূল্য কমে গিয়ে সর্বকালের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। গত শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪, প্রথমবারের মতো ভারতীয় রুপি ৮৪-এর মান অতিক্রম করে। তখন ১ ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্য ৮৪.০৯ এ নেমে আসলেও দিন শেষে রুপির মূল্য ৮৪.০৭ এ উঠে আসে। এরপর সোমবার সকালে রুপির মূল্য সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৮৪.০৫ এ দাঁড়িয়েছে। গত বুধবার এক ডলারের বিপরীতে মূল্য ছিলো ৮৩.৯৮ রুপি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই টানা দরপতনের ফলে বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর পেছনে দুই প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং দ্বিতীয়ত ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার।
শেয়ারবাজারের পতন এবং রিজার্ভের অবস্থা
গত এক মাস ধরে ভারতের শেয়ারবাজার সূচকের পতন ঘটছে। যা রুপির মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে ভারতীয় বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। যার ফলে রুপির মান কমছে।
এছাড়াও ৪ অক্টোবর সপ্তাহ শেষে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমেছে। ওই সপ্তাহে রিজার্ভ ৩৭০ কোটি ৯০ লাখ ডলার কমে ৭০ হাজার ১১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। তার আগের সপ্তাহে রিজার্ভ ছিলো সর্বকালের সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৪৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
বিশ্ববাজারের প্রভাব
বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা রুপির মানের উপর প্রভাব ফেলছে। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিকট ভবিষ্যতে ডলারের বিপরীতে রুপির পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, রুপির আরও দরপতন হতে পারতো কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সরকারি পরিসংখ্যানের কারণে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।
অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের বেকার ভাতার আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু মূল্যস্ফীতির হারও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দেখা গেছে। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি পূর্বাভাসের তুলনায় ০.২ শতাংশ বেড়েছে, যা রুপির অবস্থার ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলেছে।
বিদেশি বিনিয়োগের প্রভাব
চীন সরকার অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদান করায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করে চীনের বাজারে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। অক্টোবরের প্রথম ১২ দিনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৫৮ হাজার ৭১১ কোটি রুপির শেয়ার বিক্রি করেছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি ভারতীয় অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞদের মতে, রুপির মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। চলমান অবস্থায় রুপির মান আরও কমে যেতে পারে। ভারতীয় বাজারে চলমান অস্থিরতা অর্থনৈতিক সূচকগুলো থেকে স্পষ্ট এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের কোন আভাস নেই।
আপনার মতামত লিখুন :