শীতের সময় হিমেল বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া এবং ধুলাবালুর কারণে চোখের বিভিন্ন সমস্যার প্রকোপ বাড়ে। চোখের সংবেদনশীলতা বেশি হওয়ায় এই মৌসুমে উপযুক্ত যত্ন নেওয়া জরুরি। শীতকালে চোখে সমস্যা, এর কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
শীতে চোখে সমস্যা কেন হয়?
শীতে বাতাসে ধুলাবালু ও দূষিত কণার পরিমাণ বেড়ে যায়, যা চোখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের প্রভাবও এ সময় বেশি দেখা যায়। সাধারণত নিচের সমস্যাগুলো শীতকালে বেশি দেখা দেয়:
- চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া (ড্রাই আইস): শুষ্ক আবহাওয়ায় চোখের আর্দ্রতা কমে যায়। এটি চোখের আরামদায়ক পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- কনজাঙ্কটিভাইটিস: অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চোখ লাল হওয়া, পানি ঝরা এবং কর্নিয়ায় দানা তৈরি হতে পারে।
- ধুলাবালুর সংস্পর্শে চোখের জ্বালা: শীতে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা চোখের ভিতর ঢুকে চুলকানি ও প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- দৃষ্টি ঝাপসা: শীতকালে দৃষ্টির ঝাপসা হওয়ার একটি বড় কারণ হলো কর্নিয়ার উপরে ময়লা জমা এবং শুষ্ক চোখ।
চোখের যত্নের উপায়
শীতকালে চোখ সুস্থ রাখার জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। নিচে করণীয় নির্দেশনা দেওয়া হলো:
1. সানগ্লাস ব্যবহার করুন
শীতকালে বাইরে বের হলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। এমন সানগ্লাস বেছে নিন, যা চোখের চারপাশ পুরোপুরি ঢেকে রাখে। এটি ধুলাবালু এবং ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করবে।
2. ধুলাবালু এড়িয়ে চলুন
ধুলাবালুর সঙ্গে সংস্পর্শ কমানোর চেষ্টা করুন। বিশেষ করে রাস্তায় কাজের জায়গা বা ধূলিময় পরিবেশে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
3. চোখ কচলাবেন না
চোখে চুলকানি বা জ্বালা অনুভব হলে হাত দিয়ে ঘষবেন না। এতে হাতের জীবাণু চোখে ঢুকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। প্রয়োজনে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
4. গরম সেঁক দিন
যদি চোখ ফুলে যায় বা ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে গরম সেঁক দেওয়া উপকারী হতে পারে। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং ফোলা ভাব কমে যাবে।
5. আই ড্রপ ব্যবহার করুন
ড্রাই আইসের সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত আই ড্রপ ব্যবহার করুন। এটি চোখ আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে।
6. দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার সমস্যা দূর করুন
একটানা কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ব্যথা বা ক্লান্তি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন:
- প্রতি ২০ মিনিট পর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নিন।
- ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে তাকান।
- এ সময় চোখের পলক ফেলা নিশ্চিত করুন।
পুষ্টিকর খাবার খান
শীতকালে চোখ ভালো রাখতে সুষম খাবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চোখের স্বাস্থ্যের জন্য নিচের খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন:
- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার: গাজর, কুমড়া, পালং শাক ইত্যাদি।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: কমলা, লেবু, আমলকি।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ।
- জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার: বাদাম, ডিম।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম শর্ত। শীতকালে চোখ সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিচের অভ্যাসগুলো মেনে চলুন:
- নিজের তোয়ালে, বালিশের কাভার ও প্রসাধনী অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন না।
- অন্য কারও কাজল বা আইলাইনার ব্যবহার করবেন না।
- বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন এবং প্রয়োজনে মুখও পরিষ্কার করুন।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা হতে পারে, যা চোখের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি শুধু শরীর নয়, চোখকেও আর্দ্র রাখবে।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন
যদি চোখে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালা, লালচে ভাব বা কড়কড় করার অনুভূতি থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চোখ থেকে আঠালো তরল বের হলে বা দৃষ্টির সমস্যা হলে এটি উপেক্ষা করবেন না।
আপনার মতামত লিখুন :