আফ্রিকার উগান্ডা দেশের বুন্ডিবুগিও জেলায় একটি নতুন এবং রহস্যময় ভাইরাস এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, যা বর্তমানে সারা বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ভাইরাসটির নাম রাখা হয়েছে ‘ডিঙ্গা ডিঙ্গা’, যার অর্থ স্থানীয় ভাষায় "নাচের মতো শরীরের নড়াচড়া"। প্রথমবার ২০২৩ সালে এই রোগের কথা জানা যায়, এবং সম্প্রতি ২০২৪ সালে এটি আবারও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
নতুন এই রোগের লক্ষণ, সংক্রমণের কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসটি প্রধানত নারী ও শিশুদের আক্রান্ত করছে।
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাসের সংক্রমণ
বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩০০ মানুষ ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং আইএএনএসের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষত নারীদের মধ্যে। তবে এখনও পর্যন্ত এটি মহামারী রূপ নেয়নি এবং কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
উগান্ডার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগটি ছোঁয়াচে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। একইসঙ্গে এটি কোনো নির্দিষ্ট পোকামাকড় বা বাহকের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে কিনা সেটাও পরিষ্কার নয়।
প্রধান লক্ষণ
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায়, যা এই রোগকে অন্যান্য রোগ থেকে আলাদা করে।
১. অতিরিক্ত শরীর কাঁপুনি: আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর এমনভাবে কাঁপতে থাকে, যেন তারা নাচের ভঙ্গিতে রয়েছে। এই অস্বাভাবিক কাঁপুনিই ভাইরাসটির নামকরণের কারণ।
২. উচ্চমাত্রার জ্বর: আক্রান্তদের শরীরে তীব্র জ্বর দেখা যায়, যা অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৩. শারীরিক দুর্বলতা: ভাইরাসটি শরীরে এতটাই দুর্বলতা সৃষ্টি করে যে আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
৪. মাথাব্যথা ও শরীরব্যথা: সারা শরীরে ব্যথা এবং মাথাব্যথা এই রোগের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ।
৫. শ্বাসকষ্ট ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া: ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়, যা ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাসের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
৬. পক্ষাঘাতের ঝুঁকি: গুরুতর ক্ষেত্রে এই রোগ দেহের পক্ষাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
ভাইরাসের সম্ভাব্য কারণ
বিজ্ঞানীরা এখনও এই ভাইরাসের সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারেননি। তবে গবেষণা চলছে। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ভাইরাসবাহিত রোগ, দূষিত পরিবেশ বা সংক্রমণযোগ্য জীবাণুর উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ভাইরাসটি ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া বা নিপাহ ভাইরাসের মতো হতে পারে। গবেষণাগার পরীক্ষা এবং রোগীর শারীরিক তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
বুন্ডিবুগিও জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ডা. কিয়িটা ক্রিস্টোফার জানিয়েছেন, এই রোগের চিকিৎসায় বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে।
১. অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: আক্রান্ত রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এই ওষুধ প্রাথমিকভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
২. ভেষজ ওষুধের কার্যকারিতা অনিশ্চিত: স্থানীয়ভাবে ভেষজ চিকিৎসা ব্যবহৃত হলেও এখন পর্যন্ত এটি কার্যকর প্রমাণিত হয়নি।
৩. চিকিৎসার সময়কাল: সঠিক চিকিৎসা নিলে রোগীরা সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
৪. সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ: রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে দেরি করলে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে।
এই রোগের পূর্ববর্তী নজির
ডিঙ্গা ডিঙ্গার মতো একটি রোগের প্রমাণ ১৫১৮ সালে ফ্রান্সে পাওয়া গিয়েছিল। তৎকালীন রোগীদেরও অনিয়ন্ত্রিত শরীর নড়াচড়ার সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তখনকার সময় এটি ‘ড্যান্স প্লেগ’ নামে পরিচিত ছিল।
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাসের বর্তমান অবস্থা:
এখনো পর্যন্ত এটি মৃত্যুহীন সংক্রমণ বলেই বিবেচিত হচ্ছে কেননা এই রোগে এখনো কেউ মারা যায়নি। এছাড়াও রোগটি মহামারী রূপও নেয়নি, ভাইরাসটি স্থানীয় এলাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে রোগের কারণ এবং প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা চলছে।
আক্রান্ত হলে করনীয়
- রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
- আক্রান্ত এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে।
- ভাইরাসের প্রকৃতি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানতে সতর্ক থাকতে হবে।
উপসংহার
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস একটি নতুন ও রহস্যময় রোগ, যা বিশেষত নারী ও শিশুদের আক্রান্ত করছে। তবে ভালো খবর হলো, এটি এখনও প্রাণঘাতী নয় এবং চিকিৎসা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা এই রোগের কারণ, প্রতিকার এবং সংক্রমণের পথ চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। সতর্কতা এবং দ্রুত চিকিৎসা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান হাতিয়ার।
আপনার মতামত লিখুন :