মা ডাকটি যতটা মধুর । মা হতে পারাটা যতটা আনন্দের।প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন হলো মাতৃত্ব। কেউ কেউ মাতৃত্ব বা গর্ভকালীন সময়টাকে অসুস্থতা মনে করি আসলে কি তাই?
আমি ব্যক্তিগতভাবে বলব মাতৃত্ব টা আসলে কোন অসুস্থতা নয় এটা হল সন্তান বেডে উঠার কারণে শারীরিক ও মানসিক উন্নতি বা অবনতি। তবে প্রতিটি মেয়ের মনে একটাই সপ্ন সন্তানকে দেখবে।
কিন্তু মাতৃত্বকালীন বা গর্ভকালীন প্রথম সময়গুলা বিশেষ করে প্রথম তিন মাস নারীদের খাবারে অরুচি, অনীহা, বমি, মাথা ব্যাথা ও নানান শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। তবে কি তাতে থেমে থাকা যাবে। একটা অস্তিত্বকে নিজের ভিতর সুন্দর ও সুস্থভাবে বেড়ে তোলার জন্য খুদা মন্দা থাকা সত্ত্বেও পুষ্টি জনিত যেমন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ,পলিক সবধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে গর্ভের বাচ্চা সঠিক পুষ্টি পেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে বিশেষ করে প্রথম তিন মাস যে হরমোন ঘাটতি ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয় তা পূরণ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে।
যদি খাবার তালিকায় পুষ্টিকর ও প্রোটিন জাতীয় খাবার থাকে তাহলে রুষ্ট পুষ্ট সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব। মোট কথা হলো মায়ের খাবারের সাথে সন্তানের স্বাভাবিক গঠন ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত.. তাই আমরা এখন জানব গর্ভবতী মায়ের কি খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
গর্ভবতী মায়েদের দিনে তিনবার খাবারের পাশাপাশি দুইবার নাস্তা গ্রহণ করতে হবে।
শর্করা জাতীয় খাদ্য
শরীরে শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস হল শরকরা জাতীয় খাদ্য যেমন বাত, রুটি, ইত্যাদি তবে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত জাতীয় খাদ্য হলে এগুলোর পরিবর্তে বাদামি আটাও যে কোন গোটা জাতীয় খাবারে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে তাই সেগুলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক ভালো হবে
সকালের নাস্তা
এ সময় ভাজাপোড়া খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। এসময় ভাজাপোড়া খেলে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে ।্সকালের নাসতায় বীজ জাতীয় যেমন খেজুর ,বাদাম, চিয়া সীঠ ,মিষ্টি কুমড়ার বীজ এমন খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে কাঠবাদাম এক নম্বর স্থান দখল করেছে।
খেজুর
বিশেষ করে বমি হওয়ার কারণে অনেক সময় পরিপূর্ণভাবে খাবার গ্রহণ করতে পারেনা। যার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে খেজুরের অবদান অতুলনীয়।
সবজি
সবজির মধ্যে রয়েছে গাজর, পালং শাক, মটরশুটি, টমেটো, মুলা, বাঁধাকপি, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।
ফল
কমলা, আম, কলা, আপেল, নাশপাতি, লেবু ইত্যাদি রঙিন ফল এই সময়ে শরীরের জন্য খুবই উপকারী . দুগ্ধজাত খাবার
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ, দই ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি। এটি ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস।
আয়োডিনযুক্ত লবণ
যেহেতু ক্যালসিয়াম শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে তাই আয়োডিনের ঘাটতি নবজাতকদের শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার কারণ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় আয়োডিনযুক্ত লবণ সামুদ্রিক মাছ খাওয়া খুবই জরুরি।
ফলিক অ্যাসিড: ফলিক অ্যাসিড হল একটি বি ভিটামিনের পুষ্টি যা গর্ভাবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভ্রূণের নিউরাল টিউব ত্রুটি যেমন স্পাইনা বিফিডা এবং অ্যানেন্সফালি প্রতিরোধ করে। গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকের সময়, পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আয়রন: আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তের পরিমাণ যেমন বেড়ে যায়, তেমনি আয়রনের প্রয়োজনও বেড়ে যায়। আয়রনের ঘাটতি অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা প্রসবের সময় ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং ঝুঁকি বাড়াতে পারে ।
ক্যালসিয়াম: ভ্রূণের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। এটি মায়ের হাড়কে মজবুত করে এবং ভবিষ্যতে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
প্রোটিন: ভ্রূণের সার্বিক বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। এটি কোষ মেরামত এবং মায়ের শরীরে নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে।
সমাজে কিছু ভ্রান্ত ধারণা
এমন একটি ধারণা হলো, মা বেশি খেলে পেটের বাচ্চা বড় হয়ে যাবে, ফলে স্বাভাবিক প্রসব হবে না এবং সিজার করার প্রয়োজন হবে। ফলে মা অপুষ্টিতে ভোগেন এবং প্রসবের সময় নানা জটিলতা দেখা যায়।
যেমন-মৃগেল মাছ খেলে সন্তানের মৃগী রোগ হয় বা শিং মাছ খেলে দেহ সাপের মতো হয়-এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভুল তথ্য।
গর্ভাবস্থায় অপুষ্টি মা ও শিশু উভয়কেই সমানভাবে প্রভাবিত করে। তাই, মাতৃ নিরাপত্তা এবং শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে গর্ভবতী মায়েদের জন্য যুক্তিসঙ্গত খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মতামত লিখুন :