বাংলাদেশ রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

বিশ্ব ক্যানসার দিবস: সচেতনতা ও প্রতিরোধই হতে পারে সেরা প্রতিরক্ষা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০২:২৪ এএম

বিশ্ব ক্যানসার দিবস: সচেতনতা ও প্রতিরোধই হতে পারে সেরা প্রতিরক্ষা

আজ ৪ ফেব্রুয়ারি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ক্যানসার বর্তমানে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে সীমিত স্বাস্থ্যসেবা, সচেতনতার অভাব ও দেরিতে রোগনির্ণয় ক্যানসারজনিত উচ্চ মৃত্যুহারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

অনেকেই জানতে চান, কীভাবে জীবনযাপন করলে ক্যানসার থেকে মুক্ত থাকা যায়। এর উত্তর হলো—ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করাই ক্যানসারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

বাংলাদেশে যে ক্যানসারগুলো বেশি দেখা যায়

বাংলাদেশে স্তন, মুখগহ্বর, জিহ্বা, খাদ্যনালি, কোলোরেক্টাল, জরায়ুমুখ ও ফুসফুসের ক্যানসারের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ক্যানসার স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে অনেক ক্ষেত্রেই জীবন বাঁচানো যায়।

ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

·        স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাস্টফুড ও ট্রান্সফ্যাটযুক্ত ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করলে কোলন ও ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

·        নিয়মিত শরীরচর্চা: কায়িক পরিশ্রম ও সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

·        ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য পরিহার: ধূমপান ফুসফুস, মুখগহ্বরসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের অন্যতম কারণ। শুধু সিগারেট নয়, জর্দা, গুলসহ যেকোনো তামাকজাত পণ্য ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

·        সঠিক সময়ে টিকা গ্রহণ: জরায়ুমুখ ও যকৃতের ক্যানসার প্রতিরোধে এইচপিভি ও হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা গ্রহণ অত্যন্ত কার্যকর।

·        পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ: কলকারখানার রাসায়নিক ও বায়ুদূষণ ক্যানসারের অন্যতম কারণ। কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

·        অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও রাসায়নিকের ব্যবহার এড়িয়ে চলা: দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধসহ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।

·        নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং: ক্যানসার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ড, ম্যামোগ্রাফি, প্যাপস স্মিয়ার বা ভায়া টেস্ট এবং কোলনস্কপির মতো পরীক্ষাগুলো করা উচিত।

ক্যানসারের লক্ষণ ও দ্রুত চিকিৎসার গুরুত্ব

ক্যানসারের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

·        ওজন হ্রাস ও অরুচি

·        দীর্ঘমেয়াদি কাশি ও জ্বর

·        শরীরে কোনো পিণ্ড বা গোটা

·        গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া

·        মুখে দীর্ঘস্থায়ী ঘা

·        কাশি বা মলের সঙ্গে রক্ত

·        মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত বা মেনোপজের পর রক্তপাত

অনেকে মনে করেন, ক্যানসার মানেই মৃত্যু, কিন্তু এটি সঠিক নয়। সচেতনতা, দ্রুত রোগনির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্যানসারই প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সম্ভব। তাই সচেতন থাকুন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

Link copied!

সর্বশেষ :