সোরিয়াসিস দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের রোগ, যা ত্বকে লালচে, পুরু ও রুপালি আঁশ তৈরি করে। আঁশ তুলে ফেললে রক্তের ছোপ দেখা যায়। শীতকালে এই রোগের প্রকোপ সাধারণত বেড়ে যায়। এর সমাধান কী?
শীতে সোরিয়াসিস বেড়ে যাওয়ার কারণ
শীতে আর্দ্রতার অভাব ত্বককে শুষ্ক করে তোলে।
সূর্যের আলো কম পাওয়ার কারণে ভিটামিন ডি উৎপাদন কমে যায়, ফলে সোরিয়াসিস বেড়ে যায়।
ঠান্ডা আবহাওয়া ও ত্বকের শুষ্কতা রোগের লক্ষণগুলো আরও প্রকট করে।
যা করবেন
ত্বক আর্দ্র রাখা
প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে গোসলের পর।
ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা তেল ব্যবহার করুন, যা ত্বক শুষ্ক হওয়া প্রতিরোধ করবে।
ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখুন।
সঠিকভাবে গোসল করা
খুব গরম পানি এড়িয়ে চলুন, তাতে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।
কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন এবং গোসলের সময় সোরিয়াসিস রোগীর জন্য তৈরি শাওয়ার জেল ব্যবহার করুন।
গোসলের পর ত্বক আলতো করে শুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
সূর্যের আলো গ্রহণ
শীতের দিনগুলোতে সূর্যের আলোতে কিছু সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। সূর্যের আলোর ভিটামিন ডি সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলো হ্রাস করতে সাহায্য করে।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ
বেশি পানি খান, যাতে শরীর হাইড্রেট থাকে।
শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাবার খান, যা ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়ক।
অতিরিক্ত মসলাদার ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
মানসিক চাপ কমানো
স্ট্রেস সোরিয়াসিসের প্রকোপ বাড়ায়। তাই যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা রিল্যাক্সেশনের পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন
নিয়মিত ব্যবহারের জন্য চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ ও থেরাপি চালিয়ে যান।
সোরিয়াসিসের আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি
সোরিয়াসিসের নিরাময় সম্ভব না হলেও আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতির মাধ্যমে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের তীব্রতা, অবস্থান এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর।
আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো কী কী
টপিক্যাল থেরাপি
এই চিকিৎসা সোরিয়াসিসের হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
স্টেরয়েড ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট: প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
ভিটামিন ডি এনালগস (ক্যালসিপোট্রিয়েন): ত্বকের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
কোল টার ও স্যালিসাইলিক অ্যাসিড: মৃত ত্বকের কোষ সরিয়ে ত্বকের অবস্থা উন্নত করে।
টপিক্যাল রেটিনয়েডস: ত্বক পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে।
ফটো থেরাপি
মাঝারি থেকে তীব্র সোরিয়াসিসের জন্য এই পদ্ধতি কার্যকর।
ইউভিপি থেরাপি: বিশেষ আলোর সাহায্যে ত্বকের কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
পুভা থেরাপি: ইউভিএ এবং সরালেন ওষুধ একত্রে প্রয়োগ করা হয়।
এক্সাইমার লেজার: শুধু ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে লেজারের আলো প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা হয়।
সিস্টেমিক থেরাপি
তীব্র সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ বা ইনজেকশন দেওয়া হয়।
মেথোট্রেক্সেট: ত্বকের কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রদাহ কমায়।
সাইক্লোস্পোরিন: ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে।
রেটিনয়েডস: ত্বকের কোষের গঠন স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
বায়োলজিকস
এটি সর্বাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি, যা তীব্র সোরিয়াসিসের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ইমিউন সিস্টেমের নির্দিষ্ট টার্গেট লক্ষ্য করে কাজ করে।
টিএনএফ-অ্যালফা ইনহিবিটরস: যেমন এটানারসেপ্ট, ইনফ্লিক্সিম্যাব।
ইন্টারলিউকিন ইনহিবিটরস: যেমন উস্টেকিনুম্যাব, সেকুকিনুম্যাব।
এই ইনজেকশনগুলো সোরিয়াসিসের লক্ষণ দীর্ঘ সময়ের জন্য কমাতে সাহায্য করে।
জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে সহায়ক চিকিৎসা
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম।
মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন।
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা।
ডা. সিনথিয়া আলম, কনসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল
আপনার মতামত লিখুন :