কালো জিরা এক বিস্ময়ের নাম। দেখতে ছোট ছোট কালো দানা হলেও একে মানা হয় সর্বরোগের মহৌষধ। প্রাচীনকাল থেকে মানবদেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কালো জিরা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন কোনো রোগ নেই যে রোগের চিকিৎসায় কালো জিরার অবদান রাখে না। চুলপড়া রোধে এর গুনগান না করলেই নয়। এছাড়াও মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, আহারে অরুচি ও অবসন্নতা-দুর্বলতা দূর করতে কালো জিরাই যথেষ্ট। মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষার প্রসংগে কালো জিরাই সেরা৷ স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালো জিরার বিকল্প নেই।
এ ছাড়াও গোপন শক্তি বাড়াতে অনেকেই শরণাপন্ন হন টনিক চিকিৎসকের কাছে। তাদের বলছি, গোপন দুর্বলতায় জড়িবুটি নয়, কালো জিরা খান। এক চামচ কালো জিরায় রয়েছে অপরিসীম ক্ষমতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কালো জিরায় রয়েছে: কার্বো-হাইড্রেট,ফসফরাস, লৌহ ও ফসফেট, এছাড়াও রয়েছে জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান। ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাবসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক আছে এই কালো জিরায়।
জেনে নিই কালো জিরার আরো কিছু ব্যবহার:
মাথাব্যথা : প্রতিদিন ৩-৪ বার কালো জিরার তেল কপালে, গালে এবং কানের আশেপাশে মালিশ করতে হবে, এছাড়াও তিন দিন খালি পেটে এক চামচ করে তেল পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
যৌন দুর্বলতা : অল্প করে কালো জিরা গুড়ো করে সামান্য অলিভ অয়েল, ৫০ গ্রাম হেলেঞ্চার রস ও ২০০ গ্রাম খাঁটি মধুর সঙ্গে মেশান, এরপর মিশ্রন থেকে এক চামচ করে প্রতিদিন সকালের খাবারের পরে খান। এতে বৃদ্ধি পাবে গোপন শক্তি।
চুলপড়া : লেবু দিয়ে সব মাথার চামড়ায়, চুলের গোড়ায় ভালোভাবে ঘষুণ। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ভালোভাবে মাথা মুছে ফেলুন। চুল ভালোভাবে শুকানোর পরে সম্পূর্ণ মাথার চামড়ায় ঘষে ঘষে কালো জিরার তেল মালিশ করুন। এক সপ্তাহেই কমে যাবে চুলপড়া।
কফ, হাঁপানি ও অ্যাজমা : কফ ও হাঁপানির সমস্যায় বুকে ও পিঠে কালো জিরা তেল মালিশ এবং অ্যাজমার সমস্যা হালকা গরম পানিতে কালোজিরা মিশিয়ে ৪০-৪৫ দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি : এক চামচ মধুর সাথে সামান্য পরিমান কালো জিরা মিশিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
ডায়াবেটিস: নিয়মিত কালো জিরার গুড়ো অথবা কালো জিরার তেল খেলে ডায়াবেটিসে উপকার পাওয়া যায়।
মেদ ও হৃদরোগ : নিয়মিত চায়ের সঙ্গে কালো জিরা অথবা এর তেল মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগের উপকার পাওয়া যায় এমনকি মেদও কমে।
অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্টিক : ৫-৭ দিন রোজ তিনবার এক কাপ দুধের সাথে এক টেবিল চামচ কালো জিরার তেল পান করলে গ্যাস্টিক কমবে।
চোখে সমস্যা : চোখের উপরে নিচে এবং ভুরুতে কালো জিরার তেল মালিশ করে রাতে ঘুমালে চোখের সমস্যা কমবে।
উচ্চ রক্তচাপ : যখনই গরম পানীয় বা গরম খাদ্য যেমন ভাত খাওয়ার সময় কালো জিরার ভর্তা খান, এতে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে। এ ছাড়াও কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ২-৩ দিন পর পর মাথায় মালিশ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
জ্বর : সকাল-সন্ধ্যায় লেবুর রসের সঙ্গে এক টেবিল চামচ কালো জিরার তেল পান করলে এবং নস্যি হিসেবে গ্রহণ করলে জ্বরে উপকার পাওয়া যায়।
স্ত্রীরোগ : গর্ভবতী মায়ের ভ্রুণ সংরক্ষণে এবং প্রসব সুস্থ স্বাভাবিক করতে প্রতিদিন ৪ বার মৌরী ও মধু সাথে কালো জিরা খেলে উপকৃত হওয়া যায়।
সৌন্দর্য বৃদ্ধি : অলিভ অয়েল এর সাথে কালো জিরা তেল মিশিয়ে মুখে মেখে এক ঘণ্টা পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেললে উজ্জলতা বৃদ্ধি পাবে৷
বাত: পিঠ ও অন্যান্য বাতের যন্ত্রনায় কালো জিরার তেল মালিশ করলে এবং মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
দাঁত শক্ত করে : দই ও কালো জিরা মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার দাঁতে ব্যবহার করলে দাঁতের শিরশির অনুভূতি ও রক্তপাত বন্ধ হয়।
ওজন কমায় : ওজন কমাতে খাদ্য তালিকায় উষ্ণ পানি, মধু ও লেবুর রসের মিশ্রণ এবং সাথে কিছু কালো জিরা গুড়ো মিশিয়ে পান করার বিকল্প নেই।
আপনার মতামত লিখুন :