হাঁসের প্যারালাইসিস রোগ একটি সাধারণ ও গুরুতর সমস্যা, বিশেষ করে শীতকালে। এই রোগটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, পুষ্টিহীনতা, বিশেষ করে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ঘাটতির কারণে দেখা দেয়। এই আর্টিকেলে হাঁসের প্যারালাইসিস রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
হাঁসের প্যারালাইসিস রোগের কারণ
১. ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: হাঁসের প্যারালাইসিস রোগটি মারাত্মক ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। এই ধরনের সংক্রমণে হাঁসের মৃত্যুহার প্রায় ৮০-৯০%।
২. পুষ্টিহীনতা: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং খনিজ পদার্থের অভাবে হাঁসের প্যারালাইসিস রোগ দেখা দেয়। পুষ্টির অভাব মূলত সুষম খাদ্যের অভাবে হতে পারে।
হাঁসের প্যারালাইসিস রোগের লক্ষণসমূহ
হাঁসের প্যারালাইসিস রোগ নির্ণয় করতে লক্ষণগুলি সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ:
- হাঁসের গলার বাঁকা হয়ে যাওয়া
- পাখনা ও পা অবশ হয়ে যাওয়া (কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাখনা বা পা অবশ হতে পারে)
- আক্রান্ত হাঁস বুকের ওপর ভর করে বসে থাকে
- পুরুষ হাঁসের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে পুরুষাঙ্গ বেরিয়ে আসা
- চোখ থেকে পানি পড়া বা সর্দি হওয়া
হাঁসের প্যারালাইসিস রোগের চিকিৎসা
১. ভিটামিন এবং সুষম খাদ্য: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম খাওয়ানো হলে, পুষ্টির ঘাটতির কারণে হওয়া প্যারালাইসিস রোগ থেকে হাঁস সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
২. অ্যান্টিবায়োটিক:
- RENAMYCIN POWDER (রেনামাইসিন পাউডার) প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হাঁসকে তিন থেকে সাত দিন প্রয়োগ করতে হবে।
- THAYANO VET TABLET (থায়ানো ভেট ট্যাবলেট) প্যারালাইসিস রোগ দ্বারা আক্রান্ত হাসকে পাঁচ থেকে সাত দিন খাওয়াতে হবে।
৩. ভ্যাকসিন: ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে প্যারালাইসিস রোগ হলে হাঁসকে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
৪. নিয়মিত ভিটামিন বি১ ও বি২ প্রদান: ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা প্রতিরোধে ঘন ঘন ভিটামিন বি১ ও বি২ দিতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
১. সংক্রমণ রোধে আলাদা রাখা: প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হাঁসকে সুস্থ হাঁস থেকে দূরে রাখতে হবে।
২. বাজার থেকে কেনা হাঁস আলাদা রাখা: বাজার থেকে হাঁস ক্রয় করলে তা ৬-৭ দিন অন্য হাঁস থেকে পৃথক রাখতে হবে।
৩. মৃত হাঁস অপসারণ: সংক্রমণ প্রতিরোধে মৃত হাঁসকে খামার থেকে নিরাপদ দূরত্বে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
৪. শীতকালে প্রতিরোধ ব্যবস্থা: শীতকালে সকাল ৯টার আগে হাঁসকে পানিতে নামানো ঠিক নয়, কারণ এ সময় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
রোগ শনাক্তকরণ
প্যারালাইসিস রোগ অন্যান্য রোগের সাথে মিশে যেতে পারে। সঠিক রোগ শনাক্তকরণ ছাড়া চিকিৎসা কার্যকর হয় না বরং ভুল চিকিৎসায় হাঁসের মৃত্যু হতে পারে। সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে যাতে প্যারালাইসিস রোগ "ডাক স্লেগ" রোগের সাথে গুলিয়ে না যায়।
উপসংহার
হাঁসের প্যারালাইসিস রোগ দুইটি প্রধান কারণে হয়ে থাকে।১. পুষ্টির অভাব, এটি খামারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ২. ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং খামারের হাঁসের মৃত্যু ঘটাতে পারে। এই কারণেই হাঁসের খামার-কে প্যারালাইসিস রোগমুক্ত রাখতে সচেতনতা ও সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :